অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে বাজেট সংশোধন করবে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব বাজেট কমানো সম্ভব হবে না। ফলে উন্নয়ন বাজেট কমিয়ে বাজেট সংশোধন করতে হবে। এদিকে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমানো যাচ্ছে না। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড.
উপদেষ্টা বলেন, সংশোধিত বাজেট সাধারণত মার্চ মাসে করা হয়। কিন্তু আমরা এটা আগেই ঠিক করতে চাই। এর জন্য কিছু অনুমান প্রয়োজন হবে। যেমন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে কত কর আদায় হচ্ছে, কত বৈদেশিক সাহায্য এসেছে- তা নির্ভর করবে উন্নয়ন বাজেটের আকারের ওপর বাজেট ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে। সমন্বয়ের বোঝা আমাদের ওপর পড়েছে- উন্নয়ন বাজেটের ওপর, অন্য জায়গা ঠিক রেখে। কারণ এটা করতে হবে সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য। একটি বড় ঘাটতি বাজেট করা যাবে না.
উপদেষ্টা বলেন, একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমানো যাচ্ছে না। একটু একটু করে কমতে চলেছে। মূল্যস্ফীতি এখনও কমছে না। হ্রাস করা উচিত। সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এটি হ্রাস করা উচিত। কিন্তু মূল্যস্ফীতি এবং মূল্যস্তর এক জিনিস নয়। আলুর দাম অনেক বেশি। কিন্তু আলুর দাম যদি এখানেই থেকে যায়, তাহলে আলুর মূল্যস্ফীতি শূন্য। এটা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দাবি পূরণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি রয়েছে। মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর ব্যাপার আছে। তাই রাজস্ব খাতের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন। উন্নয়ন বাজেট কমাতে হবে এটা আমাদের কাঁধে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আকার ছোট হলে তা প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর নয়। বড় বিনিয়োগের এক বছর পরও যে কোনো খাতে উৎপাদন থেকে যায়। আমাদের দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এমন প্রকল্প হাতে নেওয়া দরকার। এতে মানুষের উপকার হয়। বাজেটের আকারের চেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল প্রকল্পগুলি মানুষের জন্য উপযোগী কিনা।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি খুবই ভালো খবর। বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ফিরে এসেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি এখনও সহনীয় পর্যায়ে নামছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। কাকে কত ভর্তুকি দেওয়া হবে এবং বিভিন্ন খাতে বেতন-ভাতা কোথায় বাড়ানো হবে তা নিয়ে ব্যস্ত অর্থ মন্ত্রণালয়। আমরা যে প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে হাতে নেওয়া হয়নি সেগুলো কাটতে ব্যস্ত ছিলাম। এখন সময় এসেছে মুদ্রানীতি, বাজেট নীতি ও এডিপি সমন্বয় করে সামগ্রিক বাজেটের আকার দেখার। সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করব। এটা জানুয়ারির শেষের দিকে হওয়া উচিত। তবে ফেব্রুয়ারিতে সংশোধিত বাজেট দেওয়া গেলে সবাই লাভবান হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার মুদ্রা সংকোচন নীতি দিয়ে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় জানতে পারবে বাজেট ঘাটতি কোথায় রাখবে, কতটুকু বৈদেশিক সাহায্য লাগবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তার হাতে থাকা প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা করতে পারবে। কর্মসংস্থান না বাড়ালে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনেক প্রকল্প রয়েছে যা মানুষের জন্য ভালো এবং অল্প পরিমাণে লাভবান হতে পারে। এ ধরনের অনেক প্রকল্প আটকে আছে। আবার অনেক বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। আমরা মনে করি চিলমারী এলাকায় নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একটি ভালো প্রকল্প। কিন্তু অনেকদিন ধরেই পড়ে ছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়টি বের করেছে। আমরা এটি সক্রিয় করেছি। কারণ আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ভালো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই, যা মানুষের জন্য উপযোগী। আমরা ছোট প্রকল্প চাই যেগুলো মানুষের জন্য বেশি উপযোগী।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, প্রায় সব প্রকল্পেই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় থাকে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রকল্প পাঠানো হলে তারা কয়েকদিন পর হ্যাঁ বা না বলে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যেকোনো প্রকল্প পরিবেশের ক্ষতি করবে। বাস্তবতা হলো, পরিবেশের কতটা ক্ষতি হচ্ছে তার বিপরীতে কতটা লাভ হচ্ছে তা দেখা হচ্ছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রকল্পটি প্রণয়ন করার পর পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হলে তারা কয়েকদিন পর হ্যাঁ বা না বলে দেয়। এর মাধ্যমে প্রকল্পটি আসলে পরিবেশবান্ধব নাকি লাভজনক তা নিশ্চিত করা যাবে না। এ কারণে আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্প প্রণয়নের সময় পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেছি। এমনটা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের তেমন গুরুত্ব থাকবে না। প্রকল্পগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যাতে পরিবেশের সর্বনিম্ন ক্ষতি হয়।
কুমিল্লা অঞ্চলের সেচ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো মনে হয় ওপর থেকে তৈরি হয়েছে। কারা এর সুবিধাভোগী কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে? সেচের যে ধরনের ব্যবস্থাই হোক না কেন, প্রকল্পে তারা চাইবে! কারণ ঐতিহ্যবাহী স্কিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেচ প্রকল্পের আধুনিকায়ন করতে হবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা ছাড়া বৃহত্তর সুবিধা অর্জন করা সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প হলো “ভোলা উত্তর গ্যাসক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন প্রক্রিয়া প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন”, “রশিদপুর-১১ ওয়েল ড্রিলিং (অন্বেষণ কূপ)” প্রকল্প এবং “অন্বেষণে 2D সিসমিক সার্ভে”। ব্লক 7 এবং 9”। প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এসব প্রকল্প আমাদের অগ্রাধিকার। অন্বেষণ, প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন এবং আবিষ্কৃত এর প্রক্রিয়াকরণ ও শোষণ। এই তিনটি প্রকল্প থেকে যে ধারণাটি আসে তা হলো- কবে পাস করা হয়েছিল। এটি 7-8 বছর আগে শুরু হয়েছিল। একটি কাজ সম্পন্ন হয় এবং উত্পাদন পর্যায়ে বন্ধ করা হয়। প্রকল্পগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বাপেক্স জানায়, এর থেকে গ্যাস পাওয়া সম্ভব। আমার প্রশ্ন, এই গ্যাসের দিকে না তাকিয়ে এলএনজি বা কয়লা আমদানির দিকে এত ঝুঁকে পড়লাম কেন? হয়তো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাদের কাছে থাকা গ্যাসকে কাজে লাগানোর জন্য তাদের আরও অনুসন্ধান করা উচিত ছিল। সর্বোপরি গ্যাস খাত দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার নিয়মের মধ্যেই কূপ খননের অনুমতি দিতে চায়।