
রংপুরে হিযবুত তাওহীদের বিভাগের কর্মী সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় তৌহিদি জনতার সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনায় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে পুরো এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
ঘটনা ঘটে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সিদাম গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালে হিযবুত তাওহীদ নেতা আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাসায় রংপুর বিভাগের কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা সহ প্রায় ৩০০ জনের উপস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। খবরটি জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা হিযবুত তাওহীদকে খ্রিস্টান ও অমুসলিমদের সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে কর্মসূচি বাতিলের আহ্বান জানান। তবে, হিযবুত তাওহীদ তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করার ঘোষণা দেয়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা হিযবুত তাওহীদের নেতা শামীমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির মালামাল ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার পাঁচটি ঘর ভস্মীভূত হয়। এছাড়া, ডিবিসি টেলিভিশনের রংপুরের রিপোর্টার আমিরুল ইসলামসহ আরও পাঁচটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, হিযবুত তাওহীদের সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্রসহ বহিরাগত লোকজনকে নিয়ে হামলা চালিয়েছে।
এ ঘটনার পরপরই সিদাম গ্রামসহ আশপাশের হাজার হাজার লোক ঘটনাস্থলে এসে হিযবুত তাওহীদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করে, তবে ৮-৯টি বাড়ি আগেই ভস্মীভূত হয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় দুই নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম সিদ্দিক নিশ্চিত করেছেন যে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বিকাল ৫টার পর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়রা হিযবুত তাওহীদ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে।
ওসির ভাষ্য, দুই পক্ষকে সরিয়ে দিলে তখন আরেকটি পক্ষ আরেক গ্রাম থেকে এসে হিযবুত তাওহীদের লোকজন যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, পেছন থেকে সেই বাড়িতে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে চার-পাঁচটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। প্রথম দফায় ছয়টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তাঁর ভাষ্য, ‘হিযবুত তাওহীদের আস্তানা, খ্রিস্টানদের আস্তানা, ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও’ স্লোগান দিয়ে তাঁর ও কয়েকজন কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। সেখানে হিযবুত তাওহীদের ১০-১৫ জন কর্মী ছিলেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বার সংগঠিত হয়ে এসে হামলা করেন।
তবে ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের দাবি, ওরা (হিযবুত তাওহীদ) সন্ত্রাসী। গন্ডগোল করার জন্য সবাই একখানে হইছে। লক্ষ লক্ষ জনতা থেকে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, কেউ জানে না। আমি ওখানে যাইনি।
অভিযোগের বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বজলুর রশীদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের লোকজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং জামায়াতের লোকজন প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে।
আগে থেকে কোনো পক্ষই বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি দাবি করে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম দাবি করেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তার আগেই যেটুকু হয়েছে, আশপাশে হয়েছে। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।
পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধ কোনো অভিযোগ আাছে কি না, জানতে চাইলে নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন তাঁরা চিকিৎসাধীন।
তবে হিযবুত তাওহীদ নেতা আবদুল কুদ্দুস দাবি করেন, তাঁরা ভুক্তভোগী হলেও পুলিশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয়জন ও তাঁর বাড়ি থেকে চারজনকে আটক করেছে।
এ বিষয়ে ডিবিসি টেলিভিশনের রংপুরের রিপোর্টার আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুস শামীমের নেতৃত্বে রংপুর অঞ্চলের কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল, তবে তৌহিদী জনতা নামে এক সংগঠনের সদস্যরা হামলা চালিয়েছে। এতে তার বাড়ি ও স্বজনদের বাড়িতে মালামাল লুট, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় পীরগাছা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।