শুল্ক বৃদ্ধির পর স্থগিত হচ্ছে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



বাংলাদেশি পোশাকের মোট রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এখন রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নানান হিসাব-নিকাশ করছে। নতুন শুল্ক কে পরিশোধ করবে, তা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে রপ্তানি আদেশ স্থগিত করেছে কিছু প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি করা মোট তৈরি পোশাকের ১৮ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিকারক প্রায় সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসেছে। তবু, শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুল্ক আরোপের কারণে প্রভাব পড়বে। শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে। পণ্যের চাহিদা কমবে। যত দ্রুত সম্ভব সরকারি পর্যায়ে পাল্টা শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে।

কারণ তারা আগের শুল্কে পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করার জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এখন নতুন শুল্কে তাদের সব হিসাব-নিকাশ বদলে যাবে। ক্রেতারা বাড়তি খরচ বহন করবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি মাসে গড়ে কমপক্ষে চার বিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়ে থাকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ীরা।

আর একটি অর্ডার পেতে চার মাস সময় লাগে। অর্থাৎ চার মাসে কমপক্ষে ১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার আর সর্বোচ্চ ৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকরা এসব অর্ডার নিয়েছেন। উৎপাদনও শুরু করেছেন।

অনেকের উৎপাদন শেষ করে রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব অর্ডারে আগে শুল্ক দিতে হতো সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। এখন একই অর্ডারে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। বাড়তি ১৯ শতাংশ শুল্কের বোঝা ক্রেতারা বহন করবেন না। তারা ঠিকই চুক্তি অনুযায়ী পোশাক কিনবেন।

এদিকে ইতিমধ্যে জাহাজে তোলা হয়েছে এমন পণ্য বন্দর থেকে ঘোষিত হার, না আগের শুল্কহারে পণ্য ছাড় হবে– তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নতুন শুল্ক ক্রেতা নাকি রপ্তানিকারক পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে উদ্যোক্তাদের। আবার প্রতিটি পণ্যের গায়ে ‘প্রাইস ট্যাগ’ থাকার আবশ্যকতা রয়েছে। জাহাজে তোলা পণ্যে পুরোনো শুল্ক অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে ‘প্রাইস ট্যাগ’ লাগানো আছে।

এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছানোর পর নতুন শুল্কহার কার্যকর হয়ে যাবে। বর্ধিত শুল্ক দিতে হলে ‘প্রাইস ট্যাগ’ পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। এটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা উদ্বেগে আছেন। সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছতে গড়ে ৩৫ দিনের মতো সময় লাগে।

মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে চট্টগ্রামভিত্তিক ওয়েল গ্রুপ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এবং ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। হাতে থাকা রপ্তানি আদেশ এবং শিপমেন্ট হওয়া পণ্যে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি অনুযায়ী মূল্যের চেয়ে কম মূল্য, অর্থাৎ ডিসকাউন্ট দাবি করতে পারে। সে রকম হলে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ে যাব আমরা।’

তিনি বলেন, বেশ কিছু কারখানার মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত ইতোমধ্যে দেওয়া রপ্তানি আদেশের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। নির্দিষ্ট করে ক্রেতারা কাঁচামাল আমদানি, পণ্য উৎপাদন ও শিপমেন্ট আপাতত স্থগিত রাখতে বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেন এমন একজন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা জানান, তার একটি অর্ডারের পণ্য আগামী ২০ এপ্রিল নাগাদ তৈরি হওয়ার কথা। নতুন শুল্ক আরোপের পর তিনি একটু সময় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেননা, ক্রেতার সঙ্গে তার ‘নেগোসিয়েশন’ করতে হবে। তার মতে, নতুন পরিস্থিতিতে আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক- দু’পক্ষের জন্য ধাক্কা। কারণ, ক্রেতা যখন অর্ডার দিয়েছিলেন, তখন শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ। ৯ এপ্রিলের পর তাকে বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এর মানে, একটি পণ্যের ক্রয়মূল্য যদি ১০ ডলার হয়, তাহলে ৫২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে এর খরচ পড়বে ১৫ ডলার ২০ সেন্ট। নতুন শুল্ক আরোপ না হলে খরচ পড়ত ১১ ডলার ৫০ সেন্ট। তার বাড়তি যে প্রায় ৪ ডলার খরচ হবে, নিয়ম অনুযায়ী তারই বহন করার কথা। কিন্তু অনেকেই তা করবেন না। যারা করবেন না, তারা হয় দামে ডিসকাউন্ট চাইবেন, বাড়তি শুল্ক রপ্তানিকারকের কাছে চাইবেন অথবা ভাগাভাগি করে দিতে চাইবেন। কোন পদ্ধতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে, তা নির্ভর করবে নেগোসিয়েশনের ওপর।

এ ব্যাপারে বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক মাসে আমি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাইনি। তবে আমি শুনেছি, কারো কারো অর্ডার আপাতত স্থগিত করার কথা বলেছেন ক্রেতারা।

বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এখনো সব পরিষ্কার নয়। দুটি ফুটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আপাতত স্থগিত করার কথা জেনেছি। তবে আমি নিট পোশাক খাতে অর্ডার স্থগিত বা বাতিলের নির্দেশনা পাইনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির ফলে বৈশ্বিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক সুযোগ নেওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, এই সুযোগে কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিসমান পণ্য স্থগিত, বাতিল, ডিসকাউন্ট বা পণ্যের মূল্য পরিশোধে বিলম্ব করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে ছোট ছোট বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তবে কোনো কোনো উদ্যোক্তা জানান, তারা পণ্য জাহাজীকরণ (এফওবি) পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। কিছু কিছু এজেন্ট প্রতিষ্ঠান কাস্টম বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৯ তারিখের শুল্ক কার্যকর হবে না। কেননা এরই মধ্যে অনেক উদ্যোক্তা আগের কার্যাদেশের পণ্য জাহাজীকরণ করেছেন, যেগুলো মধ্য এপ্রিলে গন্তব্যে পৌঁছবে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা ৭ হাজার ৯২৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। এরমধ্যে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ কোরিয়া।

সূত্র : কালের কণ্ঠ

  • তৈরি পোশাক
  • রপ্তানি আদেশ
  • শুল্ক বৃদ্ধি
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।