সংগীতজীবন গুটিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন তাহসান

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী তাহসান রহমান খান দুই যুগের বেশি সময় ধরে সংগীতপ্রেমীদের মুগ্ধ করে আসছেন। এবার তিনি জানালেন ধীরে ধীরে সংগীতজীবন গুটিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত এক কনসার্টে হাজারো ভক্তের সামনে তাহসান বলেন— ‘এটাই আমার লাস্ট কনসার্ট। আস্তে আস্তে মিউজিক ক্যারিয়ারটাও গুটিয়ে ফেলবো। মেয়ে বড় হচ্ছে— এখন কি দাঁড়ি রেখে স্টেজে দাঁড়িয়ে এমন লাফালাফি করতে ভালো লাগে?’

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যেই তার সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এরপর থেকেই ভক্তরা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে তাহসানকে খুঁজে পাচ্ছেন না। যদিও ‘অবসর’ শব্দটি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেননি, তবে তার বক্তব্য থেকেই ধারণা করা যাচ্ছে— সামনে আর নিয়মিতভাবে সংগীতে পাওয়া যাবে না তাকে।

১৯৯৮ সালে ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’ দিয়ে সংগীত জীবনের সূচনা তাহসানের। সেই ব্যান্ডের হয়ে গেয়েছেন বহু জনপ্রিয় গান। এরপর ২০০৪ সালে ‘কিছু কথা’ অ্যালবামের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার একক সংগীতযাত্রা। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজস্ব শ্রোতাশ্রেণি।

২০১২ সালে তিনি গঠন করেন নতুন ব্যান্ড ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ’, পাশাপাশি চালু করেন নিজের স্টুডিও ‘কৃত্যদাসের আবাসে’। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রকাশ করেছেন একাধিক অ্যালবাম— ‘ইচ্ছে’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘উদ্দেশ্য নেই’, ‘কৃতদাসের নিবাস’সহ আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় কাজ।

তাহসানের গাওয়া অনেক গান আজও ভক্তদের হৃদয়ে দোলা দেয়— ‘চোখে চোখে কথা হতো’, ‘যদি কোনোদিন’, ‘চলে যাও তবে’, ‘আলো’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘কতদূর’, ‘প্রেম তুমি’ তারই উদাহরণ।

অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ শহরে (অ্যাডিলেড, ব্রিসবেন, সিডনি, মেলবোর্ন, পার্থ) অনুষ্ঠিত রজতজয়ন্তী কনসার্ট সফরের মধ্য দিয়েই যেন এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

তাহসানের এই ঘোষণা ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ কেউ কষ্ট প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকে মনে করছেন তিনি হয়তো পুরোপুরি অবসর নিচ্ছেন না, বরং নিয়মিত কাজ থেকে বিরতি নেবেন।

পারিবারিক সময় কাটানো, মেয়ের বেড়ে ওঠায় মনোযোগ দেওয়া এবং ব্যক্তিগত শান্তিই তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ। তবে ভক্তরা আশা করছেন— নিয়মিত মঞ্চে না হলেও, গান লেখা, সুর করা কিংবা বিশেষ প্রকল্পে তাহসানকে এখনও পাওয়া যাবে।

তাহসান শুধু কণ্ঠশিল্পী নন— একজন শিক্ষক, অভিনেতা ও সুরকারও বটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি। শিক্ষকতা করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ইউল্যাবে।

অভিনয়ে তিনি সমান জনপ্রিয়। টেলিভিশন নাটক থেকে শুরু করে ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘যদি একদিন’— সবখানেই দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজেও যুক্ত ছিলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তাহসানকে ঘিরে ভক্তদের আবেগ সবসময়ই তীব্র। তাই তার ক্যারিয়ার হয়তো ধীরে ধীরে গুটিয়ে আসবে, কিন্তু সংগীতে তার অবদান ও জনপ্রিয় গানগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শ্রোতাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।