
শেরপুর হেড পোস্ট অফিস থেকে তিন বছর মেয়াদি একটি ডিপোজিটের অর্থ তুলতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এক নারী গ্রাহক। দীর্ঘদিনের সঞ্চিত অর্থ তুলে সেগুলোর মধ্যে এক হাজার টাকার ৫৩টি জাল নোট পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাল নোট দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেরপুরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
ভুক্তভোগী ওই নারী হলেন শেরপুর সদর উপজেলার গনই মোমিনাকান্দা গ্রামের শাহীনা বেগম (৬০)। তিনি জানান, শেরপুর পোস্ট অফিসে তিন বছর মেয়াদি একটি সঞ্চয়ী আমানত হিসাব খোলেন শাহীনা বেগম। সঞ্চয়ী আমানতের মেয়াদ শেষ হলে টাকা তুলতে গত ৭ অক্টোবর নিরক্ষর শাহীনা বেগম আসেন পোস্ট অফিসে। পোস্টাল অফিসার হিসাব করে তার হাতে তুলে দেন দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা। টাকা তোলার আগেই ওই নারী পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়াকে বলেন, ‘আমি লেহাপড়া জানি না। আমার সাথে কোনো নুক (লোক) নাই, বাবা আন্নে (আপনি) আমার টাকা গুইনা দিবাইন। টাকা থুইয়া দিমু, যাতে মাইনসে না জানে। জানলে বিপদ হইতে পারে।’ এরপর ওই কর্মকর্তা টাকা দিলে তা নিয়ে বাড়িতে রেখে দেন শাহীনা বেগম।’
পরে ডিপোজিটের টাকা জমা দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে মেয়ে সুমি আক্তার বাড়িতে আসেন। গত রোববার সকালে মেয়েকে নিয়ে বেসরকারি উত্তরা ব্যাংকে যান শাহীনা বেগম। ক্যাশিয়ার টাকা গোনার সময় ৫৩টি জাল নোট শনাক্ত করে। পরে ক্যাশিয়ার বিষয়টি ব্যাংক ম্যানেজারকে জানান।
উত্তরা ব্যাংকের ওই শাখার ক্যাশিয়ার মাহবুব রহমান বলেন, টাকা গোনার সময় ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল পেয়ে ঊর্ধ্বতন অফিসারকে অবহিত করেছি।
ভুক্তভোগী নারীর মেয়ে সুমি আক্তার বলেন, অনেক কষ্টে আম্মা টাকাগুলো জমিয়েছেন। সহজসরল মানুষটি পোস্টাল অফিসারের কাছে লেখাপড়া না জানার কথা বললে তিনি এর সুযোগ নিয়ে আম্মাকে জাল টাকা দিয়ে দিয়েছেন। আম্মা টাকা নিয়ে সেভাবেই বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন। পোস্ট অফিসের সিসি ক্যামেরা দেখে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।
অভিযুক্ত পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়া বলেন, ওই নারী ৭ অক্টোবর টাকা উত্তোলন করেন। পাঁচ দিন পর এসে তিনি দাবি করছেন টাকা জাল। এটা ঠিক নয়। আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা দেখে নিই এবং দেওয়ার সময় তাদের টাকা দেখে নিতে বলি। তিনি টাকা বুঝে নিয়েছেন। এর দায়ভার আমরা নিতে পারি না।
শেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নূর কুতুব আলী বলেন, জাল টাকার ঘটনাটি শুনেছি। অভিযুক্তের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। আসলে কী ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত হচ্ছে। যদি পোস্ট অফিসের কেউ জড়িত থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।