
‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও শিল্পের শক্তি দেখানো তার প্রভাবশালী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্মের জন্য’ এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেলেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে রয়েল সুইডিশ একাডেমি তার নাম ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও শিল্পের শক্তি দেখানো তার প্রভাবশালী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্মের জন্য’ এ বছর তিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের জন্ম ১৯৫৪ সালে, হাঙ্গেরির গিউলা শহরে। ১৯৮৫ সালে সাহিত্যজগতে তার অভিষেক প্রথম উপন্যাস সাতানতাঙ্গো প্রকাশের মাধ্যমে। উপন্যাসটিতে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামীণ সমাজের বিষণ্ণ চিত্র তুলে ধরেছিলেন তিনি। পরে ২০১৩ সালে এর ইংরেজি অনুবাদ সেরা অনুবাদিত বইয়ের পুরষ্কার লাভ করে।
সাহিত্য সমালোচকরা তাকে একজন পোস্ট-মর্ডান লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দীর্ঘ ও জটিল বাক্যে তার লেখায় ডিস্টোপিয়ান ও বিষণ্ণতা প্রাধান্য পায়। তার লেখার স্বতন্ত্র ধরণের কারণেই তাকে গোগোল, মেলভিল ও কাফকার সঙ্গে তুলনা করে থাকেন সাহিত্য সমালোচকরা।
লাসলোর প্রথম উপন্যাস সাতানতাঙ্গো চলচ্চিত্রে রূপ নেয় কিংবদন্তি পরিচালক বেলা তার-এর হাত ধরে। সাত ঘণ্টাব্যাপী এ চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে ক্রাসনাহোরকাই ও বেলা তার-এর মধ্যে সৃজনশীল সহযোগিতার এক অটুট বন্ধন গড়ে ওঠে।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যজীবনে ভাষার পাশাপাশি ভ্রমণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৮৭ সালে তিনি কমিউনিস্ট হাঙ্গেরি ছেড়ে পশ্চিম বার্লিনে ফেলোশিপে যান। এরপর মঙ্গোলিয়া ও চীন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখেন ‘দ্য প্রিজনার অব উর্গা’ এবং ‘ডিসট্রাকশন অ্যান্ড সরো বিনিথ দ্য হেভেনস’।
তার আরেক বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লেখার সময় তিনি ইউরোপজুড়ে ভ্রমণ করেন। সে সময়টাতে কিছুদিন আলেন গিন্সবার্গের নিউ ইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টেও বসবাস করেন তিনি। তিনি নিজেই জানান, ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ উপন্যাসটি সম্পূর্ণ করতে গিন্সবার্গের সহায়তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
লাসলোর পাঠক ও সমালোচকরা অনেকেই তাকে যুগান্তকারী সাহিত্যিক বলে মনে করেন। সুজান সন্টাগ তাকে ‘ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যগুরু’ বইলে উল্লেখ করেছেন। আর ডব্লিউ.জি. সেবাল্ড প্রশংসা করেছেন তার দৃষ্টিভঙ্গির সার্বজনীনতা।
তিনি ২০১৫ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার এবং ২০১৯ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেটেড লিটারেচার জেতেন।
১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১১৭ বার। সাম্প্রতিক বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন, অ্যানি এরনো, বব ডিলান, আবদুলরাজাক গুরনাহ, লুইজ গ্লিক, পিটার হান্ডকে, ওলগা তোকারচুক ও হান কাং।