
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে অন্য দেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী (৫৫) ও তার প্রধান সহযোগী গোলাম মোস্তফা আজাদকে (৪৯) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
এনায়েত ও তার সহযোগীকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আখতার মোর্শেদ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় কারাগারে পাঠায় আদালত।
জানা গেছে, শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক চলাচল করতে দেখা যায় আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীকে। এসময় তার গাড়ি থামানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তার কাছে প্রাপ্ত ২টি আইনফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে, তিনি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজ যোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছেন এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান।
তিনি গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরবর্তী সময়ে গুলশানের বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করতে থাকেন। ইতোমধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন বাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান। তিনি জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার হতাশ।
আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় বাতিল করবেন বলে জানান আসামি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে তখন সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার, অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশগ্রহণ করবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন, তা আমেরিকা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেন বলে জানান।