ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:১০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনায় সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন
খুলনা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আয়নাঘরসহ সকল নিষ্ঠুরতার মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনার ১৭ বছরের কালোযুগে দেওয়া সব মিথ্যা মামলা ও কথিত রায়ে অনেকেই মুক্তি পেলেও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কেন এখনো কারাবন্দি? স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনার ঐতিহাসিক শহিদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা মহানগরী ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হলেও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে কেন এখনো কারাগারে থাকতে হবে? জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আমরাও তো ছিলাম। এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে জামায়াতও ছিল রাজপথে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা মওকুফের সুযোগ রয়েছে। অবিলম্বে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এটিএম আজহারকে মুক্তি দিন।’
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এটিএম আজহারুল ইসলাম ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির মধ্যে তিনজন বিচারপতি ট্রাইবুনালের রায় বহাল রাখলেও একজন বিচারপতি এ রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এটিএম আজহারুল ইসলাম সেখানেও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।’
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রমগুলো সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের আমলে গ্রেফতারকৃত এটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়।’ এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশবাসী আশা করেছিল তারা সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন থেকে উদ্ধার পাবে। যারা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন তারা মুক্তি পাবে। কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো কারাগারে বন্দি রাখায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতবাক।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘‘আওয়ামী সরকার দলীয় লোকদের দ্বারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো সাক্ষ্য প্রদান করে। একজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন যে তিনি সাত কিলোমিটার দূর থেকে এবং অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন যে তিনি তিন কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন। সাক্ষীদের এই বক্তব্য অবাস্তব ও হাস্যকর। আরেকজন সাক্ষী নিজেকে এটিএম আজহারের ক্লাসমেট দাবি করে আদালতে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।’
আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী আজহারুল ইসলাম ১৯৬৮ সালে কারমাইকেল কলেজ ত্যাগ করেন। আর কথিত সাক্ষী ১৯৭০ সালে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। অতএব, আজহারুল ইসলামকে ঐ সাক্ষী তার ক্লাসমেট হওয়ার যে দাবি করেছেন, তা সব মিথ্যা বলেও সমাবেশে দাবি করা হয়। আর এ ধরনের মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হয় বলে তার মন্তব্য করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে সংগঠনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও দেওয়া হয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে তিনি জামিনে মুক্তিলাভ করার পর নিজ বাসায় অবস্থানকালে পুলিশ তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। তার বাড়ির চতুর্দিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় সহকর্মীদেরকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী সরকার এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আবারো বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন— কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান ও মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপ্যাল শেখ জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় বক্তব্য দেন— কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা শেখ মো. আবু ইউসুফ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ গাউসুল আজম হাদী, মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খুলনা জেলা উত্তর সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির ও জেলা দক্ষিণ সভাপতি আবু জার আল গিফারী।
বাংলানিউজবিডিহাব/এইচআই
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
এ টি এম আজহারুল ইসলাম
খুলনা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী