
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে হামলা–সংঘর্ষে যে চারজন নিহত হয়েছেন, তার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা এসব মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্বহীনতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করারও দাবি জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এ দাবি জানিয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যদের পক্ষে আনু মুহাম্মদ, সামিনা লুৎফা, কৌশিক আহমেদ, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, সজীব তানভীর, নাজমুস সাকিব ও অন্য সদস্যরা এই বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ঠিক এক বছর পর গতকাল আবারও একই চিত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছে গোপালগঞ্জে। এ ঘটনার পর রাষ্ট্রের আচরণ গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
গতকালের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। কমিটি বলেছে, এনসিপির সমাবেশে হামলার বিষয়ে সরকার ও পুলিশ দ্রুত তদন্তে সক্রিয় হলেও পুলিশের গুলিতে নিহত চারজনের মৃত্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উচ্চপর্যায়ের তদন্ত, দায় নির্ধারণ বা ন্যূনতম মানবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এই একপাক্ষিকতা শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতার পরিচয় নয়, এটি নাগরিক জীবনের মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্নেও ভয়াবহ বার্তা বহন করে।
সমাবেশের আগে ও সমাবেশ শেষে সমবেত নেতাকর্মীদের ওপর সংঘবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা সশস্ত্র হামলা চালায় বলেও উল্লেখ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
গোপালগঞ্জে গতকাল বুধবারের রক্তাক্ত দিনটি রাষ্ট্রীয় সহিংসতার এক পুনরাবৃত্তি বলেও মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলছে, একদিকে সমাবেশে সহিংস হামলা, অন্যদিকে গুলিতে মৃত্যুবরণ—উভয়ের মধ্যেই আছে দায় ও ব্যর্থতার সুস্পষ্ট ছাপ। লক্ষ করা যাচ্ছে, এনসিপিও অতীতে সংগঠিত মব ভায়োলেন্স ও সহিংস ঘটনার বিরুদ্ধে নৈতিকভাবে স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি। গোপালগঞ্জের মতো সংবেদনশীল এলাকায় রাজনৈতিক কৌশল ও জনস্মৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তারা যে কর্মসূচি নিয়েছে, তা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাবও প্রকাশ করে।
এ সময় বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। দাবির মধ্যে রয়েছে এনসিপির সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা; এই তদন্তের নামে যেন কোনোভাবে ঢালাও মামলা, নির্বিচার গ্রেপ্তার কিংবা রাজনৈতিক হয়রানির আশ্রয় নেওয়া না হয়; গণ–অভ্যুত্থান-পরবর্তী সব মব সন্ত্রাসের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও উসকানিদাতাদের বিচারের আওতায় আনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে অবিলম্বে সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করা।