হাত-পা ধরার কোনও জায়গা আমার নাই : পদত্যাগ প্রসঙ্গে জামিল আহমেদ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক ও নাট্যজন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় একাডেমির মঞ্চে উঠে প্রধান অতিথির বক্তব্য না দিয়ে জানালেন পদত্যাগের কথা। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্রও তুলে দেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। 

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ তার এই ঘোষণার শুরুতেই অনেকটা তিরস্কারের সুরে উপস্থিত দর্শক-সাংবাদিকদের বললেন, ‘কেউ যদি এই বক্তব্যটি ভিডিও করতে চান, করুন। এটা ভিডিও করার জন্য একেবারে সার্থক সময়!’

এরপর তিনি অকপটে বলে গেলেন তার এই পদত্যাগের কারণ, ‘আমি থিয়েটার করা বন্ধ করেছি। আমার ব্যক্তিগত জীবন ছিল না। আমি কাজ করেছি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জন্য, সবার আগে। আমি কোনও জায়গায় অর্থনৈতিক অনিয়ম করতে, অনৈতিক কাজ করতে দিতে চাইনি। আমি এই কাজগুলো করেছিলাম যেন সচিবালয় হস্তক্ষেপ না করে। আসিফ নজরুল সাহেব করেনি, ইদানীং ব‍্যাপকহারে হস্তক্ষেপ করছে। বাজেটে ০.৫ ভাগ বরাদ্দ আসেনাই। আমরা চেয়েছিলাম ১৬৫ কোটি টাকা, ওনারা দেন নাই। ধারে কাছে না, বোধহয় ১১০ কোটি টাকার মতো হবে। সমাজের কেন্দ্রে শিল্পকলা স্থাপিত হোক এই মূলনীতি নিয়ে কাজ করেছি। গণমুখী শিল্পচর্চা হোক। উৎসবমুখর বাংলাদেশ হোক এবং হাজার নদীর বাংলাদেশে হাজার মত-পথ, ‍ধর্ম-বর্ণ মিলে এরসাথে যেন কাজ করতে পারি। আমার লক্ষ‍্য ছিল শিল্পকলাতে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা আসুক, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা আসুক। মুনীর চৌধুরীর নামে এই উৎসব। যিনি আমার প্রাণের মানুষ। তিনি সেই মানুষ, যিনি কখনও চিন্তা করেননাই নাটক করতে হলে কিছু দরকার আছে। উনি সেই মানুষ যিনি জেলখানায় বসে ‘কবর’ লিখেছিলেন। এই মুনীর চৌধুরীর নাম নিয়ে আমি বলতে চাই, আমার বয়স হয়েছে ৭০ বছর। মন্ত্রণালয়ের হাত পা ধরার কোনও জায়গা আমার নাই, দরকারও নাই। মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বুঝুক, গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে আমরা কাজ করছি। সেইভাবে তারা যদি চিন্তা করে কাজ করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা, কর্মচারী শিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই কারণ তাদের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে প্রচুর নাট্যচর্চা হচ্ছে, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ আসলেই সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখন সঠিক সময় বলে মনে করি, আর বোধহয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে।’

এরপর হঠাৎ করেই বক্তৃতার ডায়াস থেকে সরে গিয়ে পাশে বসা সচিবের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। স্পষ্ট, সচিবসহ অন্যরা এই বিষয়টির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।

পত্র দিয়ে ডায়াসে ফিরে এসে বলতে থাকেন, ‘‘আমার এখন ফিরে যাওয়া দরকার আমার নিজের কাজে। আমলাতন্ত্রের পেছনে দশবার ফোন করে টাকা আদায় করা আমার নিজের কাজের জন্য না, শিল্পকলা একাডেমির জন্য। সেটা যদি না করতে দেয় এবং আমাদের যদি পদে পদে বাধা দেয়…। এটা আমি গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে আজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভেবে আপনাকে (সচিব) দিলাম। যেহেতু আমি পদত্যাগপত্র দিয়ে দিয়েছি, আমাকে যে বলতে বাধা দেওয়া হয়েছিল, ‘আদিবাসী’ বলতে পারব না। আমি আজকে বলছি, আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক, তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক, তাদের অধিকার অর্জিত হোক। আমরা গণঅভ্যুত্থানের কথা ভুলে যাচ্ছি। এই গণঅভ্যুত্থানে আমরা যে বৈষম‍্যবিরোধী বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সেটা সত‍্যিকারভাবে সার্থক হোক।’’

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ ১৯৫৫ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন।

১৯৭৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার স্নাতক প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন সৈয়দ জামিল আহমেদ। একই বছর তিনি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার টেলিভিশন প্রডিউসারস ট্রেইনিংয়েও প্রথম হন। অতুল মেধার স্বাক্ষর রেখে ১৯৮৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে থিয়েটার আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি।

তার আলোচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘অচিনপাখি ইনফিনিটি’, ‘ইনডিজেনাস থিয়েটার ইন বাংলাদেশ’, ‘ইন প্রেইজ অব নিরঞ্জন’, ‘ইসলাম থিয়েটার’, ‘এন্ড বাংলাদেশ’, ‘রিডিং এগেইন্সট দ্য ওরিয়েন্টালিস্ট গ্রেইন’,‘পারফরম্যারন্স অ্যান্ড পলিটিকস এন্টুইনড উইথ আ বুদ্ধিস্ট স্ট্রেইন’. ‘অ্যাপ্লাইড থিয়েট্রিক্স’, ‘এসেস ইন রিফিউসাল’।

সৈয়দ জামিল আহমেদ একাধারে পণ্ডিত, নাট্য পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড মিউজিক বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তার উল্লেখযোগ্য থিয়েটার প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে- ‘কমলা রানীর সাগর দীঘি’ (১৯৯৭), ‘এক হাজার আর এক থি রাত’ (১৯৯৮), ‘বেহুলার ভাসান’ (২০০৪), ‘পাহিয়ে’ (২০০৬) এবং ‘সং ভং চং’ (২০০৬)।

  • জামিল আহমেদ
  • পদত্যাগ
  • বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।