
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের বেষ্টনী ভাঙা, মব সৃষ্টির চেষ্টা ও সহকারী কমিশনার-ভূমিকে (এসি ল্যান্ড) বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) স্থানীয় ৪ নেতাসহ অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন এ জিডি করেছেন।
জিডিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে আশুগঞ্জ ভূমি অফিসের নৈশপ্রহরী কবির হোসেন আমাকে (সহকারী কমিশনার,ভূমি) ফোন করেন। তিনি জানান, এনসিপির আশুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম ডালিমের নেতৃত্বে যুগ্ম সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম, সমন্বয়কারী সুমন মৃধা ও জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আকিব জাবেদসহ অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জন এনসিপি সমর্থক অবৈধভাবে আশুগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের বেষ্টনী ভেঙে সেখানে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
এই জিডিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উল্লেখ করেন, ‘সংবাদ পেয়ে আমি এনসিপির আশুগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ডালিমকে ফোন করলে তিনি তার সমর্থকদের একাজে আরও উৎসাহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিষেধ সত্ত্বে তারা সেখানে অবস্থান নেন এবং কোনো আইন মানবেন না বলে হুমকি দেন। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের এখানে প্রোগ্রামের বিষয়ে পূর্ব অনুমতি আছে কি না জিজ্ঞেস করলে উপজেলা প্রশাসন বা আশুগঞ্জ থানায় অবহিত করা হয়নি বলে জানায়।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরও উল্লেখ করেন, ‘সরকারি অফিস প্রাঙ্গণে অফিসের বেষ্টনী ভেঙে এভাবে কোনো প্রোগ্রাম না করার ব্যাপারে তাদের সতর্ক করা হলেও তারা সেখানে অবস্থান নেয় এবং কোনো অনুমতি ব্যতীত সেখানে মিলাদ মাহফিল ও জুলাই মঞ্চ বানানোর হুমকি দেয়। তারা সেখানে জড়ো হয়ে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন।’
জিডিতে এসি ল্যান্ড আরও অভিযোগ করেন, ‘জেলার এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আকিব জাবেদ, ফোন করে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিলে মব সৃষ্টির মাধ্যমে ভূমি অফিস ভাংচুর করা এবং বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। ঔদ্ধত্যের সাথে এটাও বলেন যে, তাদের কোনো অনুমতির দরকার নেই, তারা অনুষ্ঠান আয়োজন করবে, আমরা পারলে ঠেকাতে। তারা মূলত জুলাই মঞ্চ বানানোর নামে উপজেলা ভূমি অফিসের জায়গা দখল করার পায়তারা করছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির আশুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম ডালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা একটা মিলাদ মাহফিল করতে চেয়েছি। এটা আগে বঙ্গবন্ধু চত্বর ছিল। এখানে আওয়ামী লীগ নিয়মিত প্রোগ্রাম করত। ৫ আগস্টের পর আমরা নাম দিয়েছি ‘মীর মুগ্ধ চত্বর’। সেখানে মীর মুগ্ধের ছবিও লাগানো হয়। স্মৃতিবহুল এ জায়গায় জুলাই শহীদদের স্মরণে আমরা মিলাদ মাহফিল করি। এজন্য লেবার পাঠাই জায়গাটি পরিষ্কার করার জন্য। টিনের বেড়া খুলে পরিষ্কার করা হয়।’’
আমিনুল ইসলাম ডালিম আরও বলেন, ‘এসি ল্যান্ড ফোন দিয়ে বলেন আমরা নাকি ভাঙচুর করেছি। সেসময় তিনি বলেন, এসে কাউকে পেলে গ্রেপ্তার করবেন। আমি বলেছিলাম, আমাদের বাধা দিয়েন না। আমরা অনুষ্ঠানটি করে ফেলি। কিন্তু সেখানে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানান তিনি। হুমকির বিষয়টি বানোয়াট।’
এদিকে, উল্লেখিত স্থানেই আসর নামাজের পর জুলাই স্মৃতিচারণ এবং শহীদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন শেষ হয়।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘এসিল্যান্ড অফিসের কম্পাউন্ডে দীর্ঘদিন ধরে তারা চাচ্ছে জুলাই মঞ্চ করবে। আমি বারবার বলেছি এটা অফিসের ভেতরের জায়গা। টিন দিয়ে বেড়া ছিলে। আজকে বেড়া সরিয়ে ঢুকেছে। আমার, এসি ল্যান্ড বা থানা থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, এটা সরকারি অফিস– প্রোগ্রাম করা ঠিক হবে না। তারপরও তারা সরেনি।’