হৃদরোগ ইনস্টিটিউট : দুই কর্মকর্তার বিরোধে এক মাস বন্ধ প্যাথলজি বিভাগ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) প্যাথলজি বিভাগ প্রায় এক মাস বন্ধ। এতে সিবিসি পরীক্ষা করাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, রি-এজেন্ট (পরীক্ষা উপকরণ) সংকট এবং নতুন যন্ত্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্যাথলজি কার্যক্রম।

জানা যায়, গত ৪ আগস্ট প্যাথলজি বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. আবদুল্লাহ আল মুয়ীদ খানের উদ্যোগে বিভাগে আটটি যন্ত্র বসানো হয়। এবিসি করপোরেশন ও বায়োটেক সার্ভিস যন্ত্রগুলো দিতে আবেদন করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে সেগুলো স্থাপন করা হয়। তবে অভিযোগ ওঠে, ডা. মুয়ীদ খান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এগুলো স্থাপন করেন। যারা যন্ত্র দিয়েছেন, তাদের রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হবে। এর কমিশন ভোগ করবেন ডা. মুয়ীদ খান।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডা. মুয়ীদ খানের উদ্যোগে বেঁকে বসেন ল্যাব ইনচার্জ ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গণেশ চন্দ্র ভৌমিক। রি-এজেন্ট সংকট ছাড়াও তাদের দুজনের বিরোধে গত ১৪ আগস্ট থেকে বন্ধ হয়ে যায় প্যাথলজির কার্যক্রম।

সরেজমিন গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ২৬০ নম্বর কক্ষ ফাঁকা পাওয়া যায়। পাশের কক্ষে কর্মরত দুজন জানান, প্রায় এক মাস বন্ধ সিবিসি পরীক্ষা। প্রতিদিন শতাধিক রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন।

কর্মকর্তারা জানান, পুরোনো যন্ত্রের ১২ হাজারের বেশি রি-এজেন্টের মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে। নতুন যন্ত্র আসছে বলে নতুন করে রি-এজেন্ট কেনেনি কর্তৃপক্ষ। এতে সংকট দেখা দেয়। অবশ্য ডাইলুয়েন্ট নামে অন্যান্য পরীক্ষার আরও ১২ লাখ টাকার রি-এজেন্টের মেয়াদ আগামী ২১ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।

প্যাথলজির এক কর্মকর্তা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে কিছুদিন পরীক্ষা করা হয়। সেগুলোও শেষ হওয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গত ১৪ আগস্ট ডা. মুয়ীদ খানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন ডা. দিলশাদ পারভীনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও গত এক মাসে তিনি প্যাথলজি চালু করতে পারেননি।

গণেশ চন্দ্র ভৌমিকের অভিযোগ, নতুন যন্ত্র বসলে পুরোনো রি-এজেন্ট ব্যবহারযোগ্য থাকে না। যন্ত্রগুলো বসানো হলে নির্দিষ্ট কোম্পানির রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থে এগুলো করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বাড়তি খরচের কারণে যন্ত্রগুলো স্থাপনে রাজি ছিল না। ডা. মুয়ীদ খান দাপট দেখিয়ে সেগুলো বসিয়েছেন। তিনি বলেন, আগের রি-এজেন্টগুলো স্টোরে থেকে মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বাতিল না করে ডা. মুয়ীদ ব্যবহারের নির্দেশ দেন। রি-এজেন্ট সংরক্ষণে আমাদের হাত নেই।

এ ব্যাপারে ডা. মুয়ীদ খান বলেন, নতুন যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে রোগীদের ২১ ধরনের পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন এটিই আমার কাল হয়েছে। যন্ত্র বসাতে কমিশনের অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। এখানে আমাকে এককভাবে দায়ী করার সুযোগ নেই। কারণ, হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট পাঁচ বিভাগের মতামত নিয়েই যন্ত্রগুলো বসানো হয়।

তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্টের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় এক বছর মেয়াদি ১২ হাজারের বেশি রি-এজেন্ট মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গণেশ চন্দ্র ভৌমিকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

রি-এজেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওএমসি লিমিটেডের পরামর্শক গোলাম সোহরাওয়ার্দী বলেন, গত জুনে হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন অর্থবছরে রি-এজেন্ট সরবরাহে কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি। এখন আমরা বাকিতে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছি।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডা. মুয়ীদকে সরানো হয়েছে। তাঁর প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতা ও প্যাথলজিক্যাল জ্ঞানের অভাবে সংকট হয়েছে। আশা করছি, চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ এলে সংকট কেটে যাবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়েও সিবিসি পরীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।’ তবে এটি মানতে নারাজ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টসের (বিএসিবি) যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ফাতেমা খান মজলিস। তিনি বলেন, রি-এজেন্টের মেয়াদ শেষ হলে ফেলে দিতে হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ উপকরণ সংরক্ষণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যনীতির পরিপন্থি।

ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. তানজিন সুলতানা বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট যন্ত্রে চলার কথা নয়। সেটি দিয়ে পরীক্ষার ফলাফল অনির্ভরযোগ্য তো বটেই; ব্যবহার করাও অনৈতিক।

সূত্র : সমকাল

  • প্যাথলজি বিভাগ
  • বন্ধ
  • হৃদরোগ ইনস্টিটিউট
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।