১১৬ বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতি চর্চায় আলো ছড়াচ্ছে সান্তাহার মিশন স্কুল

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: বাংলানিউজবিডিহাব।

বগুড়া: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১১৬ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে বিদ্যালয়টি। ১৯০৯ সালে ‘চার্চেস অব গড মিশনের শিক্ষা প্রকল্প’-এর আওতায় বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। এখানে প্রতিনিয়ত ধর্মীয় সম্প্রীতির চর্চা হয়ে আসছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানকার শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সৎ, আদর্শবান এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে শিক্ষার আলো দিয়ে আসছে। যেখানে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মাবলম্বী শিশুরা একসঙ্গে পড়ালেখা শিখছে। ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়ের পাশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি উপাসনালয়ও করা হয়।

সান্তাহার পৌর শহরের রথবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় একটি টিন সেডের শ্রেণিকক্ষে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আরেকটি টিন সেড নির্মিত হয়। এতেই পাঠদান চলছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র ও ৯২ ছাত্রী। তাদের জন্য আছেন সাতজন শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের মুসলিম, এরপর হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মের। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সমাবেশে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে কোরআন তিলাওয়াত, গীতাপাঠ ও প্রার্থনা করে। এ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতির চর্চা হয় প্রতিনিয়ত।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের লক্ষ্য শুধু পরীক্ষার ফলাফল ভালো করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সৎ, আদর্শবান এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এখানকার শিক্ষার্থীদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বেশ সাফল্য রয়েছে। এ বিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি হয়েছে, যারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। হয়েছেন সুনাগরিক ও আদর্শ মানুষ।

শেখ মোহাম্মদ সেলিম নামে এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, আমার চার প্রজন্ম— দাদা, বাবা, আমি ও আমার মেয়ে-এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আশপাশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে ওঠায় একসময়ের সেরা এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে, তবে শিক্ষার মান এখনও অনন্য।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আল জোয়ানুরের বাবা জহুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের পাঠ পরিকল্পনা ভালো ও নিয়মিত ক্লাস হয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করে, যা আমাদের জন্য গর্বের। শিক্ষার মান ও নৈতিক শিক্ষাদানের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীরা পাঠদানে বেশ মনযোগী। এখানকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভালো ফলাফল করে আসছে।

বগুড়া চার্চেস অব গড মিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডোনাল্ড দাস বলেন, ‘সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশের গর্ব। এখানে শিক্ষার মান উন্নত রাখার পাশাপাশি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবন নির্মাণ, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নৈতিক শিক্ষার আরও উন্নত পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতা, সম্প্রীতি ও মানবিকতার যে চর্চা হয়, তা দৃষ্টান্তমূলক। এটি শুধু একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটি শিক্ষার আলো জ্বালানোর একটি দীপশিখা। শত বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের মননশীলতা, নৈতিকতা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করছে। আজও বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে। বগুড়া জেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠগুলোর মধ্যে সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যতম।’

বাংলানিউজবিডিহাব/এসআর

আদমদীঘি উপজেলা
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
চার্চেস অব গড মিশন
ডোনাল্ড দাস
ধর্মীয় সম্প্রীতি
বগুড়া
মুসলিম
সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়
হিন্দু ও খ্রিষ্টান

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।