
গাজার উদ্দেশে রওনা দেওয়া ত্রাণবাহী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ৪৪৩ জন স্বেচ্ছাসেবীকে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে বেআইনিভাবে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী—এমন অভিযোগ করেছে ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ। আটক ব্যক্তিরা বিশ্বের ৪৭টি দেশের নাগরিক এবং তারা মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে ফ্লোটিলা জানায়, ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঢুকে জলকামান এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছিটিয়ে জাহাজগুলোতে হামলা চালায় এবং জোরপূর্বক স্বেচ্ছাসেবীদের তুলে নেয়। পরে তাদের একটি সামরিক জাহাজে করে অজ্ঞাত বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংগঠনটি বলছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ডাক্তার, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরাও। অধিকাংশ জাহাজের সঙ্গে এখন কোনো যোগাযোগ নেই।
ফ্লোটিলা জানায়, ইসরায়েল বাহিনী তাদের নৌযানগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দিয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবীদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। অনেক জাহাজের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সুমুদ ফ্লোটিলার দাবি অনুযায়ী যেসব জাহাজ নিশ্চিত ইসারেয়েলের হাতে আটক হয়েছে—ফ্রি উইলি (পোল্যান্ড), ক্যাপ্টেন নিকোস (পোল্যান্ড), ফ্লোরিডা (পোল্যান্ড), অল ইন (ফ্রান্স), কারমা, অক্সিগোনো (পোল্যান্ড), মোহাম্মদ ভাহর (নেদারল্যান্ডস), জেনো (স্পেন), সিউল (পোল্যান্ড), হিও (পোল্যান্ড), মর্গানা (ইতালি), ওটারিয়া (ইতালি), গ্র্যান্ডে ব্লু (পোল্যান্ড), দেইর ইয়াসিন (আলজেরিয়া), হুগা (পোল্যান্ড), অরোরা (ইতালি), ইউলার (স্পেন), স্পেকট্রে (স্পেন), আদারা (স্পেন), আলমা (যুক্তরাজ্য) ও সিরিয়াস (যুক্তরাজ্য)।
যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়া জাহাজগুলো—মিয়ামিয়া, ভ্যাংলেইস, পাভলস, ওয়াহু, ইনানা, মারিয়া, আলাকাতালা, মেটেক, মাংগো, আদাজিও, আহেদ তামিমি, অস্ট্রাল, আমস্টারডাম, ওহওয়াইলা, সেলভাগিয়া, কাতালিনা, এসত্রেলা ও ফেয়ার লেডি।
ফরাসি পতাকাবাহী মিকেনো জাহাজটি ফিলিস্তিনি জলসীমায় প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে তার সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পোলিশ ম্যারিনেট এখনো স্টারলিংক ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে ৬ জন আরোহী অবস্থান করছেন।
ফ্লোটিলার পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েলভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আদালাহ। তারা জানিয়েছে, আটকদের বিষয়ে খুব সামান্য তথ্য দেওয়া হয়েছে, এবং তাঁদের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হচ্ছে কিনা, সেটাও নিশ্চিত নয়।
ফ্লোটিলা বিশ্বের সব দেশ, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এই ‘অপহরণ’ বন্ধ এবং আটক মানবিক সহায়তাকারীদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। ফ্লোটিলা বলছে, ইসরায়েলের দমননীতি তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় সরাসরি সমুদ্রপথে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো। এতে বিশ্বের ৪৭টি দেশের অন্তত ৪০০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন।