
অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জে ২৩টি সমবায় সমিতি প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভও করেছেন তারা।
রোববার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে তারা লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান এবং জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’- ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার গ্রাহক জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে থানা গেটের সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে তারা থানার সামনের সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।
একই দাবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও, ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি ও ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, প্রবাসী, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। তারা জানান, লাভের আশায় তারা ২৩টি সমবায় সমিতিতে কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা রাখতেন। এখন মূল টাকা ফেরত পাওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মাদারগঞ্জসহ জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সমিতিগুলোর মালিকেরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী। তিনি বলেন, দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে মালিকেরা আত্মগোপনে থাকলেও ওই অর্থে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে। আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি, এসব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। প্রশাসন লোকদেখানো আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। মামলা হয়েছে থানায় ও আদালতে। যখন কর্মসূচি পালিত হয়, তখন প্রশাসনের লোকজন টাকা উদ্ধারে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। গ্রাহকের অন্তত ৭৩০ কোটি টাকা এই সমিতিগুলোতে জমা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন উল্লেখযোগ্য। কেবল এই ছয়টি সমিতির কাছেই জমা রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফাতেমা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ভাংবাড়ী এলাকার হাসেম মিয়ার স্ত্রী। দুটি সমিতিতে তিনি ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। বাড়ি থেকে কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মিলন বাজার এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল সমিতির মো. মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, সমিতিগুলোর গ্রাহকেরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে তারা সড়ক ছেড়ে দেন।