ডেঙ্গু জ্বর বর্তমানে একটি ভয়াবহ সমস্যা। এই রোগটি এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই বছর বিশেষভাবে উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই এবার দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই আমাদের জানা দরকার, দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হলে কি হয় এবং কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু হল একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। যখন কোনো ব্যক্তি সংক্রামিত মশার কামড় খান, তখন ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। এর পর থেকে সাধারণত ৩-১৫ দিনের মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা এবং শরীরে ফুসকুড়ি অন্যতম।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কি হয়?
ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে: DEN-1, DEN-2, DEN-3 এবং DEN-4। একজন ব্যক্তি যদি একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তবে তিনি ওই ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু অন্য তিনটি ধরন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, যার ফলে শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই অবস্থায় পেটের ব্যথা, বারবার বমি, এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে পারে। কখনো কখনো এটা মারাত্মক রূপ ধারণ করে, যেমন মাল্টি অর্গান ফেইলিউর।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুর লক্ষণ
যদি কেউ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তবে লক্ষণগুলো বেশিরভাগ সময় একই থাকে। তবে মারাত্মক অবস্থায় কিছু ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- তীব্র জ্বর
- মাথাব্যথা
- চোখের পেছনে ব্যথা
- পেটের ব্যথা
- রক্তক্ষরণ
এই লক্ষণগুলোর মধ্যে পেটের তীব্র ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্তপাত, এবং ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
ডেঙ্গুর কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। তাই মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই সবচেয়ে ভাল উপায়। আপনার বাড়ির চারপাশে মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে হবে। মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নীচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:
- মশার বসবাসের স্থান পরিষ্কার করুন: কোথাও পানি জমতে দেবেন না।
- মশার কামড় থেকে রক্ষা: মশারি ব্যবহার করুন, এবং বাইরে বের হলে ফোলা জামা পরুন।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা: জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং ডেঙ্গুর পরীক্ষা করান।
লক্ষণ দেখা দিলে করণীয়
যদি আপনি জ্বর অনুভব করেন, তবে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং ডেঙ্গুর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার শরীরের অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জ্বর শুরু হওয়ার ১-২ দিনের মধ্যেই যদি অবস্থার অবনতি হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে যদি কোনো উদ্বেগ থাকে, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন। চিকিৎসকরা বলেছেন, “ডেঙ্গুর সময় প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করবেন না।”
সচেতনতার গুরুত্ব
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে যদি আপনি জানেন যে পূর্বে ডেঙ্গু হয়েছিল, তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তাই, নিজের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার প্রতি যত্নশীল হন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
শেষ কথা
ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। সচেতনতা এবং সতর্কতা মেনে চললে আমরা নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করতে পারব। যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম