বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। আজ বুধবার, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।
ড. ইউনূস বৈঠকে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা চান, বিশেষ করে পাচার হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে। বৈঠক শেষে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ বিষয়টি জানান।
শফিকুল আলম বলেন, “আমরা বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অনেক লোক বাড়ি-ঘর করেছেন। পাচার হওয়া এই অর্থ কিভাবে ফেরত আনা যায়, তা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য চেয়েছেন ড. ইউনূস।” তিনি আরও জানান, সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে দেশের পুনর্গঠন এবং উন্নয়নে ব্যবহার করতে চায়।
বুধবার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ছাড়াও জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ও এর পুনরুদ্ধার
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ বিভিন্ন সূত্র এবং পরিসংখ্যান বিভিন্ন সংখ্যা প্রদান করে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি গত বছরের মে মাসে জানিয়েছে যে, গত ৫০ বছরে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যার মানে গড় বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। অন্যদিকে, গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯-২০১৫ সময়কালে অন্তত ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা ৯১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে কিছু অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হতে পারে, এবং বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবেও কিছু অর্থ ফিরে আসতে পারে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১২০ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৯ কোটি ডলার এসেছে অফশোর জুরিসডিকশন থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে, বিদেশি বিনিয়োগের ১৯ শতাংশ এসেছে এমন দেশগুলো থেকে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
অর্থনীতির আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণও বাড়তে পারে, বিশেষত সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতে অনিয়ম, এবং দুর্নীতির কারণে। তবে, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং নতুন আর্থিক পণ্যের উদ্ভাবন পাচারকে আরও সহজ করে তুলেছে। ক্রিপ্টোক্যারেন্সি ও ভার্চুয়াল মুদ্রার মত প্রযুক্তি পাচারকে আরও জটিল করেছে, যা ফেরত আনার প্রচেষ্টা আরো কঠিন করে তোলে।
এ পরিস্থিতিতে, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, এবং কার্যকর আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।