সম্প্রতি বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে বাড়িঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে গেছে। গ্রামীণ সড়কগুলো ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেনীর তিন উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তিন দিন ধরে বেশিরভাগ ঘরবাড়ি পানির নিচে রয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সব ১৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনীর আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর এই প্রথম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন ফেনীর বাসিন্দারা। বর্তমানে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকরা পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার করতে শুরু করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এবং সেনাবাহিনীও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। বুধবার বিকেল থেকে সেনাবাহিনী ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। বিজিবির সদস্যরাও তিনটি স্পিডবোটে উদ্ধার কাজে সহায়তা করছেন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডও উদ্ধার কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে।
ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে এবং আরও ছয়টি স্পিডবোট ফেনীর পথে রয়েছে। বিজিবির সদস্যরা কাজ করছেন এবং কোস্টগার্ডও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে।
আজ সকালে নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকায় পানি থইথই করছে। রশিদ কলোনি এলাকার বাসিন্দা মনু দাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে তার বসতঘরের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে এবং রান্নাবান্না করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর ও পানছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দীঘিনালা উপজেলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় বন্যার কারণে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ধুরং নদের বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ফটিকছড়ি উপজেলার ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার কিছু ইউনিয়নও প্লাবিত হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে। কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর প্লাবিত হয়েছে এবং ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটেও বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি বাড়ছে।
### FAQs
বর্তমানে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি বন্যার অবস্থা?
ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, এবং অন্যান্য পার্শ্ববর্তী এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার কারণে কত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে?
লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থা বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে কী করছে?
সেনাবাহিনী, বিজিবি, এবং কোস্টগার্ড উদ্ধার কাজ করছে। ছয়টি স্পিডবোট ব্যবহার করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বন্যার কারণে কোন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়েছে?
দীঘিনালা ও রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্যার জন্য কি কোনো ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে?
এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ১৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চাল, এবং ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে বৃষ্টির পরিমাণ কত ছিল?
সীতাকুণ্ডে ২৪ ঘণ্টায় ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লার গোমতী নদীতে কী অবস্থায় আছে?
গোমতী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলায় কতো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে?
ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে প্লাবিত হয়েছে।
মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি কত উঁচুতে রয়েছে?
মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরে কী পরিস্থিতি?
আখাউড়া স্থলবন্দর প্লাবিত হয়েছে এবং ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।