সম্প্রতি, অতি ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, সুনামগঞ্জ, ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যার তীব্রতার মুখোমুখি হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া, এবং সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। এখানে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো প্রতিটি জেলার বন্যার অবস্থা এবং পরিস্থিতি।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সব ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে, এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলাগুলোর বেশ কিছু ইউনিয়নও প্লাবিত হয়েছে। সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার গোমতী নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিং বাজেহুড়া গ্রাম তলিয়ে গেছে, ফলে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজারসংলগ্ন কাঠের সেতু এলাকায় তীব্র স্রোতের কারণে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে গেছে।
ফেনী
ফেনীর তিন উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী, ও ছাগলনাইয়ায় বন্যার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এখানে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। ফেনীর আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ১৯৮৮ সালের পর এ ধরনের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়নি ফেনীর বাসিন্দারা। উদ্ধারকর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর আটটি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। বেশ কিছু মাছ ও মুরগির খামার ভেসে গেছে, এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। গেলো ২৪ ঘণ্টায় ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও উজানের অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে চারটি পৌরশহরসহ ৪০টি এলাকা তলিয়ে গেছে। ২১ আগস্ট থেকে মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে, ফলে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে ৬২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে বৃষ্টির সঙ্গে উজানের পাহাড়ি ঢল সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি বুধবার ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। নদী ও হাওর ভরা বর্ষার পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে, যা বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে টানা ভারী বৃষ্টি ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিঙ্গিনালা গ্রামের ৪০ বছরের পুরানো সেতু ভেঙে গেছে। দীঘিনালা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এবং পানিবন্দি প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। ফেনী নদীর পানি বেড়ে রামগড় পৌরসভাসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে, ফলে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
FAQ
বন্যার কারণে কোন জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, সুনামগঞ্জ, ও খাগড়াছড়ি জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার পানির উচ্চতা কতটুকু বেড়েছে?
ফেনীতে পানির উচ্চতা ১৯৮৮ সালের বন্যার পর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সীতাকুণ্ডে ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
উদ্ধার তৎপরতায় কে কে অংশ নিচ্ছে?
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, এবং স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে।
নোয়াখালীতে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে?
নোয়াখালীর মাছ ও মুরগির খামার ভেসে গেছে, এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীনতা দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে কত লোক পানিবন্দি হয়েছে?
লক্ষ্মীপুরে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।