বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২২ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পর্ষদ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে এবং পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালককে নিয়োগ দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন এক অধ্যায় সূচনা করবে, যা স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান: মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ

নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। তিনি রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে, সোনালী ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংক উভয়ই উন্নত সেবা প্রদান করেছে। মো. আল মাসুদ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের এমডি এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ব্যাংকিং খাতে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি এখন ইসলামী ব্যাংকের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন।

আগের পর্ষদ বাতিলের সিদ্ধান্ত

ইসলামী ব্যাংকের পূর্ববর্তী পর্ষদ, যার চেয়ারম্যান ছিলেন আহসানুল আলম, বাতিল করা হয়েছে। আহসানুল আলম চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের ছেলে। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয়, এবং ব্যাংকটির অধীনে থাকা শেয়ারগুলির ৮২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৭৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে এবং এটি বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

নতুন পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরা

নতুন পর্ষদে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন:

  • মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক।
  • আব্দুল জলিল: আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।
  • ড. এম মাসুদ রহমান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক।
  • আবদুস সালাম: সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ এবং ব্যাংকের পূর্ববর্তী স্বতন্ত্র পরিচালক।

এই নতুন পর্ষদ গঠন করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চায়।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ব্যাংক

২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সেই থেকে ব্যাংকটি বিতর্কিত হয়ে ওঠে। এস আলম গ্রুপের হাতে ব্যাংকটির ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যা ব্যাংকের সুশাসন ও স্বচ্ছতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণকে স্বচ্ছ ও দক্ষ করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটি নতুনভাবে পরিচালিত হবে এবং এস আলম গ্রুপের প্রভাব মুক্ত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বুধবার ইসলামী ব্যাংকের পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ব্যাংকের টাকা ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে।” তিনি আরও জানান যে, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর পর্ষদও ধীরে ধীরে ভেঙে দেয়া হবে।

নতুন পর্ষদের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নতুন পর্ষদের প্রধান লক্ষ্য হলো ইসলামী ব্যাংকের সেবার মান উন্নয়ন করা এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। তারা ব্যাংকের ক্ষতি কমাতে এবং আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ রাখতে নিবেদিত থাকবে। নতুন পর্ষদ ইসলামী ব্যাংককে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে এবং ব্যাংকটির সেবার মান উন্নত করবে।

এই পদক্ষেপগুলি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং আশা করা যায় যে, এটি দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

 

FAQs

 ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ কবে গঠন করা হলো?

নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে।

 নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান কে?

নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।

ইসলামী ব্যাংকের পুরানো পর্ষদ কেন বাতিল করা হলো?

পুরানো পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে ব্যাংকের পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা এবং দুর্বলতার কারণে।

ইসলামী ব্যাংকের পুরানো চেয়ারম্যান কে ছিলেন?

পুরানো চেয়ারম্যান ছিলেন আহসানুল আলম।

ইসলামি ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠনের কারণ কী?

বাংলাদেশ ব্যাংক সুশাসন ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করেছে।

নতুন চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ কে?

তিনি রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এবং সোনালী ব্যাংকেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এস আলম গ্রুপের প্রভাব ইসলামী ব্যাংকে কেমন ছিল?

এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করছিল, যা ব্যাংকিং সুশাসনে বাধা ছিল।

নতুন পর্ষদ কী কাজ করবে?

নতুন পর্ষদ ব্যাংকিং সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কেন ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিল?

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

নতুন পর্ষদে কোন সদস্যরা আছেন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও একটি চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট।

মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এর পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা কী?

তিনি সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে কাজ করেছেন এবং অন্যান্য ব্যাংকেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এস আলম গ্রুপের ব্যাংকের শেয়ার হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা কেন?

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এস আলম গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ কিভাবে গঠিত হলো?

বাংলাদেশ ব্যাংক স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে।

ইসলামী ব্যাংক কি এবার উন্নত হবে?

নতুন পর্ষদ ব্যাংকিং সুশাসন ও সেবার মান উন্নয়ন করতে কাজ করবে, যা ব্যাংকটির উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে।