দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করেছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা প্রবাহ এবং কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির ফলে বাংলাদেশের ১২টি জেলা বন্যায় তলিয়ে গেছে। এই অবস্থায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং প্রভাবিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ।
বর্তমান পরিস্থিতি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারী বর্ষণের তীব্রতা কমেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ফেনী জেলায় বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৃত্যুর তথ্য
বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে মারা গেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিসংখ্যান
বন্যার কারণে দেশের ১১টি জেলার ৭৭টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ৫৮৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ৯ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯।
ত্রাণ ও সাহায্য কার্যক্রম
সরকার বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। নগদ ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে, এছাড়া শিশুখাদ্য ও গোখাদ্যের জন্য পৃথকভাবে ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০ হাজার ১৫০ টন চাল এবং ১৫ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া, ৭৭০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ফেনীতে একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি ভি-স্যাট চালু করা হয়েছে যা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করবে।
স্বাস্থ্য সতর্কতা
বন্যার পরবর্তী সময়ে পানিবাহিত রোগবালাই বাড়তে পারে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে যাতে করে এই রোগগুলো ছড়িয়ে না পড়ে। চিকিৎসাসেবা দিতে ৭০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা বন্যাপীড়িত এলাকায় সেবা প্রদান করছেন।
ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
আবহাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যোগাযোগ ও সাহায্য
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বরের মাধ্যমে তথ্য ও সহযোগিতা প্রদান করছে। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ এবং লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ছাত্র সমাজ ও বিজিবি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে।
FAQs
বন্যার কারণে কতজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে?
এখন পর্যন্ত ১৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যায় কোন কোন জেলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ?
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ফেনী জেলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
বন্যায় কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
মোট ৫০ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম কি কি রয়েছে?
সরকার নগদ টাকা, চাল, শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্য বিতরণ করছে।
বন্যার পর স্বাস্থ্যসেবা কিভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে?
৭৭০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ফেনীতে একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে।
বন্যার পর পানিবাহিত রোগের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য কি পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে?
৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
কতগুলো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে?
৩ হাজার ৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
যোগাযোগের জন্য কোন নম্বরটি ব্যবহার করা যেতে পারে?
০২-৫৫১০১১১৫ নম্বরটি তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।