গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল এবং দেশে ফিরে তার বিচারের দাবির প্রেক্ষিতে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে: “বাংলাদেশ সরকার যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আবেদন করে, তাহলে কি ভারত তাকে ঢাকার হাতে তুলে দেবে?”

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতীয় সরকার বুঝতে পারছে যে শেখ হাসিনার দিল্লিতে অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত-বিরোধিতা হিসেবে দেখা হতে পারে। এজন্য, ভারত তৃতীয় কোনো দেশে শেখ হাসিনাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছে।

ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান

২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে জঙ্গি, পাচারকারী এবং চোরাচালানকারীদের প্রত্যর্পণের জন্য একমত হয়েছিল। ২০১৬ সালে এই চুক্তিতে কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তির গুরুত্ব নিয়ে সন্দিহান, বিশেষ করে যখন কোনও প্রত্যর্পণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। যদি ভারত মনে করে যে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ, তাহলে তারা সেই দাবি মেনে নাও নিতে পারে। এছাড়া, যদি প্রত্যর্পণের পর দীর্ঘ কারাবাস বা প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, তবেও অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যেতে পারে।

শেখ হাসিনার অবস্থান

বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে দিল্লির উপকণ্ঠে একটি আধাসামরিক বাহিনীর সেফ হাউসে রাখা হয়েছে। তবে তাদের ঠিকানা সম্পর্কে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি নেই যে শেখ হাসিনা কোন ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে ভারতে রয়েছেন। বিশেষ ভিসা বা রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারত সরকার নীরব রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে এবং দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি তুলেছে। বিভিন্ন মামলা, যেমন হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন যে, ২০১৩ সালের চুক্তির ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারত সরকার এই দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন যে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পরিবার নিহত হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধী তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভারত একটি প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকারের হাতে শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দিতে পারে না এবং এজন্য তৃতীয় কোনো দেশে তাকে নিরাপদে রাখার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়নি। বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি তোলার পাশাপাশি বলেছেন যে, তাকে ফেরানো হলে ঢাকায় তার বিচার হবে। তবে, এই দাবির বিষয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ মতামত বিভক্ত।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা জটিল। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুক্তির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ দাবির প্রতি সাড়া দেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান, এবং শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে তাকে আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে, এই পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা দেখার বিষয়।

FAQs:

১. শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের পর তার অবস্থান কী?

শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং দিল্লির একটি সেফ হাউসে রাখা হয়েছে।

২. ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে কী বলছে?

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির গুরুত্ব কম এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ দাবির প্রতি সাড়া দেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান।

৩. শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কি ধরনের মামলা হয়েছে?

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

৪. বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য কি আবেদন করেছে?

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করেনি।

৫. ভারত কি শেখ হাসিনাকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে?

হ্যাঁ, ভারত শেখ হাসিনাকে তৃতীয় কোনো দেশে নিরাপদে রাখার জন্য চেষ্টা করছে।

৬. বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী দাবি করেছেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন যে, ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে ভারত শেখ হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।

৭. শেখ হাসিনার সেফ হাউসে অবস্থানের ঠিকানা কী?

শেখ হাসিনার সেফ হাউসের ঠিকানা সরকারি ভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

৮. শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি?

ভারত সরকার এখনও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

৯. বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ কী ছিল?

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি তুলেছে।

১০. ভারত শেখ হাসিনাকে কি ফিরিয়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা অনুভব করছে?

ভারত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা অনুভব করছে না, এবং তৃতীয় দেশে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।