২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঘটে যাওয়া বিডিআর বিদ্রোহ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিভাজনমূলক ঘটনা। এই বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে, বিশেষত ১৫ বছর পর, এই বিদ্রোহের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে একটি নতুন হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহিম, যিনি বিডিআরের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং যিনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।

আব্দুর রহিমের কারাগারে মৃত্যু এবং মামলা

অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ, মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে, ২৫ আগস্ট রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বিজিবি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পিলখানা বিদ্রোহ মামলার আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, নুর আলম চৌধুরী লিটন, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও হাসানুল হক ইনুসহ মোট ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ ও পটভূমি

বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ উল্লেখ করেছেন যে, ২০০৯ সালের পিলখানা বিদ্রোহের সময়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিদেশি এজেন্ট নিয়োগ করে বিডিআরের সদর দপ্তরে পরিকল্পিতভাবে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করে। বিদ্রোহের অভিযোগে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

আব্দুল আজিজ জানান, তার বাবা মো. আব্দুর রহিম পিলখানায় ডিএডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং তাকে বিদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, পিলখানার ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করতে গিয়ে, তার বাবাকে কারাগারে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হয়।

নতুন মামলার বিবরণ

বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, মামলায় মৃত আব্দুর রহিমের মৃত্যুর কারণ হিসেবে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, ২০১০ সালের জুলাইয়ে দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার এবং চিকিৎসকরা এই মামলায় আসামি হয়েছেন। মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন যে, কারাগারের চিকিৎসকরা তার বাবার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছেন।

মামলা প্রক্রিয়া এবং আদালতের আদেশ

মামলার শুনানি আজ দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে এবং আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। মামলার বিস্তারিত বিবরণ অনুসারে, এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্ন ১: পিলখানা বিদ্রোহ কি ছিল?

উত্তর: ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটে, যেখানে ৫৭ সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন।

প্রশ্ন ২: বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমের মৃত্যুর কারণ কী ছিল?

উত্তর: আব্দুর রহিমকে পরিকল্পিতভাবে কারাগারে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন ৩: কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা মামলার আসামি হয়েছেন?

উত্তর: মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহমেদ, মোশারফ হোসেন কাজলসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: মামলার আবেদন কবে করা হয়েছে?

উত্তর: মামলার আবেদন ২৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৫: মামলার পরবর্তী শুনানি কবে অনুষ্ঠিত হবে?

উত্তর: মামলার শুনানি আজ দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রশ্ন ৬: আব্দুল আজিজ কোন দাবি করেছেন মামলায়?

উত্তর: আব্দুল আজিজ দাবি করেছেন যে, তার বাবা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৭: কারাগারে আব্দুর রহিমের মৃত্যু কবে ঘটেছিল?

উত্তর: আব্দুর রহিমের মৃত্যু ২০১০ সালের ২৯ জুলাই ঘটে।

প্রশ্ন ৮: মামলায় অজ্ঞাতনামা কতজন আসামি রয়েছে?

উত্তর: মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৯: মামলায় অভিযোগের ভিত্তি কী?

উত্তর: অভিযোগের ভিত্তি হল, পিলখানা বিদ্রোহের পর পর পরিস্থিতি এবং পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ।

প্রশ্ন ১০: মামলায় বাদী হিসেবে কে আছেন?

উত্তর: মামলায় বাদী হিসেবে অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ আছেন।

বিডিআর বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?

বিডিআর বিদ্রোহ ঘটেছিল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই দিনগুলিতে, পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে, যা দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। বিদ্রোহের ফলে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন এবং এই ঘটনাটি বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

বিডিআর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?

বিডিআর বিদ্রোহ, যা “পিলখানা বিদ্রোহ” নামেও পরিচিত, মূলত অসন্তোষ ও বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।