ঢাকা মহানগরের চারটি থানায় দায়ের করা মামলা নিয়ে সিএমএম আদালত আনসার বাহিনীর ৩৯০ জন সদস্যকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের এই আদেশ সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দেওয়া হয়।
মামলার প্রেক্ষাপট
ঢাকা শহরের শাহবাগ, রমনা, পল্টন এবং বিমানবন্দর থানায় পৃথকভাবে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলাগুলিতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তারা অবৈধভাবে সচিবালয়ে প্রবেশ করে সরকারী কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, আনসার সদস্যরা ৮ থেকে ১০ হাজার সংখ্যা নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন এবং সেখানে কর্মরত কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের এই কর্মকাণ্ডে সচিবালয়ে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়, এবং সরকারি কাজেও বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া, গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গ্রেপ্তার এবং জামিন
পুলিশ জানায়, শাহবাগ থানার মামলায় ১৯১ জন, রমনা থানার মামলায় ৯৮ জন, পল্টন থানার মামলায় ৯৫ জন এবং বিমানবন্দর থানার মামলায় ৬ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আনসার সদস্যদের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হলেও, আদালত সব অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গ্রেপ্তারকৃতদের পরবর্তীতে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংঘর্ষ এবং আন্দোলন
চাকরি জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে আনসার সদস্যরা কয়েকদিন ধরে ঢাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। রবিবার তারা সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি জাতীয়করণের দাবি তোলেন। এই ঘেরাওয়ের ফলে সচিবালয়ের কর্মীরা বের হতে পারছিলেন না এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভের সময় আনসার সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও আটকে রাখেন। এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, যারা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জমায়েত হন, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে করে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
বিচারিক ব্যবস্থা এবং পুলিশি প্রতিক্রিয়া
সংঘর্ষের পরে ঢাকার চারটি থানায় মোট ৪২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিছু আনসার সদস্য পুলিশি কাজে বাধা দিয়ে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
আনসার বাহিনীর সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। তারা আনসারদের দাবির উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং আনসার ডিজি বৈঠকে আশ্বাস দেন, কিন্তু উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে অবস্থান করতে থাকেন।
শিক্ষার্থী ও জনগণের প্রতিক্রিয়া
সংঘর্ষের ফলে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকার ও আনসার বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানান। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছেন।