জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের ও সংগীতের এই অসামান্য প্রতিভার জীবনপ্রদীপ ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্রে ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) নিভে যায়। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশবাসী গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

জন্ম ও শৈশব

কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। শৈশবকাল থেকেই তিনি কঠিন দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। পিতার মৃত্যু এবং পরিবারের অস্বচ্ছলতা তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল, কিন্তু এসব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও তিনি একটি শক্তিশালী এবং সৃজনশীল জীবনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

সাহিত্য ও সংগীতের জগতে প্রবেশ

কবি কাজী নজরুল ইসলাম মাত্র ২৩ বছর বয়সে বাংলা সাহিত্যে বিপ্লব এনে দিয়েছিলেন। তার এই সীমিত সময়ের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। তার কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছে। তিনি যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন এবং প্রেমের কবি হিসেবে খ্যাত হয়েছেন। কবি নিজেই বলেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ–তূর্য’।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে তার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে আনা হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি দেওয়া হয় এবং জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৪ সালে কবিকে সম্মানসূচক ডি–লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দেওয়া হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক প্রদান করা হয়।

মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও দিবসটি পালন করছে।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সকাল থেকেই কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত গান

কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আরটিভি মিউজিক তার বিখ্যাত গান ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে’ নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করেছে। গানটির কণ্ঠ দিয়েছেন পান্থ কানাই, অনিমেষ রায় ও সৈয়দ সুজন। নিতাই ঘটকের আদির সুরে এই গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন সৈয়দ সুজন। ভিডিওটি পরিচালনা করেছেন নূর হোসেন হীরা।

নজরুলের সাহিত্য ও সংগীতের ভূমিকা

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানগুলি যুগের পর যুগ প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তাঁর সাহিত্য ও সংগীতের মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের ওপর অত্যাচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কাজের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, তাঁর সৃষ্টিগুলি আজও সমাজের বিভিন্ন আন্দোলনে প্রেরণা হয়ে থাকে।

জীবন ও কর্মজীবন

কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবনের শুরু হয়েছিল শৈশবেই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিশীলতা তার সামগ্রিক জীবনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর তিনি সৃজনশীলতা হারান। তবে, তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন হিসেবে সমাদৃত।