সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার একটি নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, শনাক্তকরণ এবং গুমের পরিস্থিতি তদন্ত করবে। ১৪ বছরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে ৫ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনটি ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল গুমের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করবে। কমিশনের কাজ হবে এই সময়সীমার মধ্যে যাদের গুম করা হয়েছে তাদের সন্ধান করা এবং গুম হওয়ার কারণগুলো বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান করা।

৫ সদস্যের  কমিশনের সদস্যরা

এই পাঁচ সদস্যের কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। অন্যান্য সদস্যরা হলেন:

  • হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী: একজন অভিজ্ঞ বিচারক যিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ।
  • মানবাধিকারকর্মী নূর খান: মানবাধিকার রক্ষায় তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
  • ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস: শিক্ষা ও মানবাধিকার বিষয়ে তার জ্ঞান কমিশনের তদন্তে সহায়ক হবে।
  • মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন: মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

কমিশনের দায়িত্ব

কমিশনটির কাজ হবে:

  • জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান: কমিশনটি ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে যাদের গুম করা হয়েছে, তাদের সন্ধান করবে।
  • গুম হওয়ার কারণ নির্ধারণ: কমিশন তদন্ত করবে কেন এবং কিভাবে এই গুমের ঘটনা ঘটেছে।
  • সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন প্রদান: কমিশন তদন্তের বিস্তারিত বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবে এবং সুপারিশ করবে।
  • আত্মীয়দের অবহিত করা: যারা গুম হয়েছেন তাদের পরিবারকে তাদের অবস্থার বিষয়ে অবহিত করবে।
  • অন্য প্রতিষ্ঠানগুলির তদন্তের তথ্য সংগ্রহ: গুমের ঘটনায় অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করবে।

কমিশনের কর্মকৌশল

কমিশনটি আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশিত হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে এবং কমিশনের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে। কমিশনকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তি দায়িত্ব প্রদান করতে পারবে।

অতীতের প্রেক্ষাপট

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারবিরোধী নেতা এবং সমালোচকদের গুম করার অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আলোচিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন কয়েক হাজার ব্যক্তি, যারা কয়েক বছর ধরে গুম অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুম আছেন, কিন্তু তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি জানিয়েছেন যে প্রতিটি গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গুমের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিশনদের তালিকা