বাংলাদেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিধান বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাষ্ট্রপতি ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ জারি করেছেন। এটি নতুন অধ্যাদেশে উল্লেখিত ৩৪(ক) ধারাটি বিলুপ্ত করে, যা নির্বাহী আদেশে এইসব জ্বালানির দাম বাড়ানোর অনুমতি দিত।

আগের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন সংশোধন করে সরকারকে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ ও সমন্বয়ের ক্ষমতা দেয়। এই ক্ষমতার অধীনে সরকার সরাসরি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারতো, যা পরবর্তীতে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

বর্তমানে, নতুন অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি বা হ্রাসের সিদ্ধান্ত এখন থেকে গণশুনানির মাধ্যমে নেওয়া হবে। এর ফলে, বিইআরসি আবারও দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে। এই পরিবর্তনটি জনগণের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

নতুন অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য হলো, গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া, যা জনগণের উদ্বেগ এবং অসন্তোষের প্রতি সাড়া দিতে সাহায্য করবে। আগে সরকার যখন ইচ্ছা তখন জ্বালানির দাম বাড়াতে পারতো, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাহত করেছিল।

১৯৮২ সালের ২২ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে, বিইআরসি আইন, ২০০৩ এর ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন থেকে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হবে, যা আগে ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হতো। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এই সময়সীমা কমিয়ে ৩০ দিন বা আরও কম সময়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।

অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় নিয়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। বিইআরসি’র সচিব (যুগ্মসচিব) ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান জানিয়েছেন, আইন সংশোধনের ফলে, দাম নির্ধারণের ক্ষমতা কমিশনের কাছে ফিরে এসেছে এবং এটি জনগণের স্বার্থে কার্যকর হবে।

আগের অধ্যাদেশে বলা হয়েছিল যে, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিইআরসি গণশুনানি ছাড়াই দাম সমন্বয় করতে পারবে। কিন্তু নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে দাম নির্ধারণ করতে হবে।

তবে, পেছনে থাকা রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের ক্ষোভের কারণে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনের পর, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেয়।