বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশের আইন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অধ্যাদেশের গুরুত্ব

২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের অনুমোদন প্রদান করা হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে এই আইন বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ (আইন নম্বর ৬৩) প্রণীত হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে, যা বর্তমানে বৈষম্যমূলক মনে হচ্ছে।

বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের কারণ

বিগত সরকারের সময়ে প্রণীত এই আইনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল। আইনটি অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’ (এসএসএফ) এর মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে, আইনটির কারণে কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়, যা সুস্পষ্ট বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সকল ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এই সরকারের উদ্দেশ্য হলো সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা এবং সকল নাগরিকের প্রতি সমান সুযোগ প্রদান করা।

আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত

‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়ার অনুমোদনের পাশাপাশি, ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১’ সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে কিছু বিধান বাতিল করা হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজন করা হবে।

আইন বাতিলের পেছনে আদালতের রিট

২৫ আগস্ট একটি রিট আবেদন করা হয়, যেখানে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ এবং ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১’ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচ আর এস) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান এই রিট দায়ের করেন। রিটে উল্লেখ করা হয় যে, এই আইনগুলো অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।

নতুন অধ্যাদেশের প্রভাব

নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধা প্রদানকারী আইনের সব বিধান বিলুপ্ত হবে। এতে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তাদের সন্তান, এবং অন্যান্য সদস্যদের জন্য এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছিলো এমন নিরাপত্তা সুবিধা আর থাকবে না।

উপদেষ্টা পরিষদের মন্তব্য

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পরে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলস্বরূপ গঠিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা নেই এবং এটি বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।”