বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রধান ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি ঢাকার সেগুনবাগিচায় সাংস্কৃতিক ঐক্য ফ্রন্ট আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভক্ত করার অধিকার নিয়ে শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন।

শফিকুর রহমান বলেন, “ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভক্ত করার অধিকার কারও নেই। সকল মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। ধর্ম মানুষের নিজস্ব পছন্দ। এ বিষয়ে জোরজবরদস্তি করার কোনো অধিকার কারও নেই।” তিনি এই কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, রাজনীতিবিদরা দেশের মালিক নয়; তারা শুধু জাতির সেবক। তাই সকল নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, জামায়াতের আমীর জানান যে, গত কয়েক বছরে দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। “সাংবাদিকদের বিবেক অনুযায়ী কাজ করতে হবে। চিন্তার ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করা উচিত নয়। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কাউকেও পরোয়া করার সুযোগ নেই,” বলেন তিনি।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, “বাংলাদেশে এখনও চূড়ান্ত বিজয় আসেনি। আমাদের আরো ত্যাগ করতে হবে। বাংলার আকাশে এখনও শকুন উড়ছে, এজন্য আমাদের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিগত স্বৈরশাসক প্রায় সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে। তারা জামায়াতসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে শেষ করার চেষ্টা করেছিল এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছিল। এখন জনগণ বর্তমান সরকারের কাছে এসব প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার আশা করেছে। আমরা সরকারকে এই সময় দিতে প্রস্তুত।”

জামায়াতের আমীর স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “পতিত স্বৈরাচারী শাসকদের আমলে বিডিআরের ওপর প্রথম আঘাত এসেছিল। সেই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা এখনও শনাক্ত হয়নি। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি এবং আল্লাহর সহায়তা চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন।”

তিনি ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। তারা এ জাতিকে উদ্ধার করেছে। এখন তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে। এটা তাদের শেষ আত্মত্যাগ নয়, এটি শুরু মাত্র। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন এবং সৎ থাকতে হবে। অন্যদেরও সৎ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, “যারা বিপ্লবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে, তারা পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী। এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ভোট নিশ্চিত করবে এবং জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসবে। আমরা সেই সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া পেশ করবো।”

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “যারা নিজস্ব বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ভুলে অন্যের অনুসরণ করে তারা অগ্রসর হতে পারে না। আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন জাতি হতে পারে না এবং তারা দেশ জাতিকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়। আমাদের নিজস্ব বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও শিকড়কে আঁকড়ে ধরে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হবে।”