সূরা হাশর, কোরআনের ৫৯তম সূরা, মুমিনদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান অধিকার করে তার গভীর পাঠ ও আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টির জন্য। এই সূরা মদিনায় অবতীর্ণ হয় এবং এতে মোট ২৪টি আয়াত রয়েছে, প্রতিটি আয়াতেই রয়েছে অমূল্য শিক্ষা ও জ্ঞান। এর মধ্যে, শেষ তিনটি আয়াত বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং এগুলি নিয়মিত পাঠের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত।
এই শেষ তিনটি আয়াত আল্লাহর মহিমা, দয়া এবং সর্বজ্ঞতার সবচেয়ে সম্মানিত নাম ও গুণাবলী প্রকাশ করে। বিশেষ করে, সকাল ও সন্ধ্যায় এই আয়াতগুলির পাঠ করার জন্য বিভিন্ন হাদিসে সুপারিশ করা হয়েছে, যা নিরাপত্তা ও শাফায়াতের মত বহু উপকার নিয়ে আসে।
সূরা হাশরের পরিচিতি
সূরা হাশর, আল কোরআনের ৫৯তম সুরা, মদিনায় অবতীর্ণ। এতে মোট ২৪ আয়াত রয়েছে এবং এটি মদিনার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনা দেয়। এই সুরায় ইহুদিদের নির্বাসনের প্রসঙ্গ রয়েছে, যারা নবী করিম (সা.)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের গুরুত্ব
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতে আল্লাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়াতগুলো আল্লাহর গুণাবলি ও ক্ষমতার বর্ণনা করে এবং আল্লাহর নামগুলোর প্রতি বিশ্বাস ও পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ (22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [الحشر:22-24]
আয়াতের বাংলা উচ্চারণ
১. হুআল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাদি, হুয়ার রাহমানুর রাহিম। ২. হুআল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। ৩. সুবহানাল্লাহি আম্মা য়ুশরিকুন। হুআল্লাহুল খালিকুল বা-রিউল মুছাওয়িরু লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়া হুয়াল আজিজুল হাকিম।
আয়াতের বাংলা অর্থ
১. আল্লাহই একমাত্র সত্তা যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের সবকিছু জানেন। তিনি পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু। ২. আল্লাহই একমাত্র সত্তা যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তিনিই মালিক, তিনিই পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল এবং অহংকারের অধিকারী। আল্লাহ যাদের শরিক করা হয়, তিনি তাদের থেকে পবিত্র। ৩. আল্লাহই স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা; সব সুন্দর নাম তার। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত
হজরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি সকালবেলা তিনবার “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজীম” পাঠ করে এবং এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ে, আল্লাহ তাকে ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। যদি ঐ দিন ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। সন্ধ্যায় পড়লেও একই ফজিলত প্রাপ্ত হয়। (তিরমিজি ২৯২২)
হাদিসের সূত্র
- তিরমিজি: হাদিস ৩০৯০
- আবু দাউদ: হাদিস ২৯২২
- মুসনাদ আহমদ: হাদিস ১৯৭৯৫
- কানজুল উম্মাল: হাদিস ৩৫৯৭
প্রতিকার ও গুরুত্ব
এই তিন আয়াত পাঠের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর বিভিন্ন সুন্দর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পারে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও আশীর্বাদ লাভের আশাবাদী হতে পারে। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এই আয়াতগুলো পাঠ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত মুসলিমদের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এগুলো আল্লাহর অপরিসীম ক্ষমতা ও গুণাবলীর পরিচায়ক এবং পড়লে একজন মুসলিম আল্লাহর বিশেষ করুণা ও মাগফিরাত লাভ করতে পারেন।