বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১৯ কর্মকর্তার চাকরি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে, যারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের মিথ্যা অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো চাকরি ফিরে পাননি এবং তাদের অনেককে এখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে কথিত বৈঠকের মিথ্যা অভিযোগে দুই যুগ্মসচিবসহ ১৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, এই কর্মকর্তারা গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন যা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. এ. কে. এম জাহাঙ্গীর, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান, আইএমইডির বার্তা বাহক মো. মুজিবুল হক, পরিসংখ্যান বিভাগের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. নকিতুল্লাহ, এবং সিএজি কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মান্নানকে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, অন্যান্য কর্মকর্তারাও যেমন সিনিয়র সহকারী সচিব এ. কে. এম. ইহসানুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. বাদিউল কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী জহিরুল ইসলাম, পিআইডির অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. বেলাল হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. তফিকুল ইসলাম, এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইব্রাহীম মিয়াজি, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হোছাইন, অফিস সহায়ক আবুল হাসনাত, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক মো. মোজাহিদুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের অফিস সহায়ক আজিম উদ্দিন, এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর শহীদুল ইসলামকে বিভাগীয় মামলা দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এটি প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলস্বরূপ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের জীবনে এক ধরনের অন্ধকার অধ্যায় শুরু হয়। তারা দীর্ঘ দশ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন এবং তাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
যদিও ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তখন এসব কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তারা এখনো কোণঠাসা রয়েছেন। চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য তারা এখনো সচিবালয়ের বারান্দায় ঘুরছেন এবং তাদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তাদের কেউ কেউ এখনও চাকরি ফিরে পাননি এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে যে, আওয়ামী শাসনামলে ঠুনকো অপরাধে শাস্তি পাওয়া এই কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল অথবা পদোন্নতি দেবার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে যারা নিয়োগকৃত কর্মকর্তা, তারা সহযোগিতা করছেন না। এ ব্যাপারে বর্তমান প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন এসব কর্মকর্তা।
একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হলো, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে, তা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখা হচ্ছে। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলো অগ্রসর না হওয়ার কারণে, সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অতীতে যারা প্রভাবশালী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে এখন নানা অভিযোগ উঠেছে এবং অনেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া, জামায়াতপন্থী নেতাদের মুক্তি, বিচার বিভাগে পরিবর্তন, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন সরকারের অধীনে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিবর্তন হয়েছে।