ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ প্রায় দুই মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন মিশেল বার্নিয়ে, যিনি একজন অভিজ্ঞ এবং রক্ষণশীল রাজনীতিক। বার্নিয়ে এখন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং দেশের জন্য একটি স্থিতিশীল জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়েছেন।
বার্নিয়ের নতুন দায়িত্ব ও লক্ষ্য
মিশেল বার্নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক্তন ব্রেক্সিট মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে, তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিতে গভীর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে, তার মূল চ্যালেঞ্জ হবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা।
ফ্রান্সের আগাম সংসদ নির্বাচনে কোনো দল বা শিবির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, ফলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৫ সালের বাজেট পাশ করা এখন একটি জরুরি বিষয় হয়ে উঠেছে। বার্নিয়ে আশা করছেন, বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও সমর্থন
বার্নিয়ের নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটছে না। চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল র্যালি দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন আপাতত তার মনোনয়ন সমর্থন করছেন, তবে অভিবাসন ও নিরাপত্তার মতো বিষয়ে আরএন দলের সংশয় রয়েছে। ল্য পেন সম্ভাব্য সমর্থন প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছেন। দলের আরেক নেতা সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন ডাকার শর্তও আরোপ করেছেন।
বার্নিয়ের ব্যক্তিগত জীবনের প্রেক্ষাপট
৭৩ বছর বয়সী বার্নিয়ে ফ্রান্সের আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। তার পূর্বসুরি গার্বিয়েল আটাল ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সি প্রধানমন্ত্রী। বার্নিয়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে, তিনি ২৭ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলেও, তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেছে।
বামপন্থি প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্সের বামপন্থি রাজনৈতিক জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) বার্নিয়ের নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এনএফপি দাবি করেছে, সর্বোচ্চ ফলাফলের পরও একজন ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে, যা তাদের মতে একটি ডানপন্থি সরকার গঠনের সংকেত দেয়। চরম বামপন্থি নেতা জঁ-লুক মেলাশোঁও এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক নেতারা বার্নিয়ের নিয়োগকে সমর্থন জানিয়েছেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি তার সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
মিশেল বার্নিয়ের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক দৃশ্যপট একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। তার অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের উপর দেশটির স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের আশা নির্ভর করছে। তবে, সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা তিনি মোকাবিলা করতে পারবেন কিনা, তা সময়ই বলবে।