সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন পরিদর্শন করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এই পরিদর্শনটি শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত হয়।

গণভবনকে জাদুঘর বানানোর পরিকল্পনা

গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের পরিকল্পনা

পরিদর্শনের পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, গত বৃহস্পতিবার তাদের কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে গণভবনকে একটি স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করা হবে। এই জাদুঘর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি এবং শেখ হাসিনার শাসনকালে জনগণের ওপর যে অত্যাচার, গুম, খুন, এবং নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তা সংরক্ষণ করবে। গণভবনকে জাদুঘর হিসেবে তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে যা স্থাপত্যশিল্পী, আর্কিটেক্ট এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হবে।

নাহিদ ইসলামের বক্তব্য

নাহিদ ইসলামের বক্তব্য

তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, কেবিনেটে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তর করা হবে। ৫ আগস্ট গণভবন জয় করার মাধ্যমে যা অর্জিত হয়েছে, তার জন্য এই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়ে একটি নিদর্শন হিসেবে রাখা হবে, যা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট শাসকদের পরিণতি এবং জনগণের আসল ক্ষমতার গুরুত্বকে তুলে ধরবে।

তিনি আরো জানান, গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাথমিক পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বা পরবর্তীতে একটি ফরমাল কমিটি গঠন করা হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে যাতে জাদুঘরটি দ্রুত উদ্বোধন করা যেতে পারে।

জাদুঘরের ভিতরে কি থাকবে?

নাহিদ ইসলাম বলেন, জাদুঘরে ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানের স্মৃতি, শহীদদের তালিকা, এবং গত ১৬ বছরে যেসব নিপীড়ন, গুম, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া, গণভবনের বর্তমান ভগ্নাবশেষ অবস্থাকে যতটা সম্ভব সংরক্ষণ করে জাদুঘর করা হবে। ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশনও থাকবে যা ঐতিহাসিক তথ্য এবং ঘটনাবলি তুলে ধরবে।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কোথায় বসবাস করবেন সেই প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই বিষয়টি পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনায় থাকবেন।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন

জাদুঘরের ভবিষ্যৎ

পরিদর্শনের পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন যে গণভবনে প্রচুর দেওয়াল লিখন এবং গ্রাফিতি রয়েছে যা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া, লুটপাট হওয়া অনেক আসবাবপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। তারা এই ক্ষোভ এবং স্মৃতিগুলোকে যথাসম্ভব ইনটেক রেখে জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা করছেন।

বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে এবং উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন যে, এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্য হলো স্বৈরাচার, ফ্যাসিজম এবং জনগণের সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করা। এই পদক্ষেপটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি উদাহরণ হিসেবে পরিচিত হবে।