বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছেন, যার মধ্যে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং কিডনির সমস্যা রয়েছে। বর্তমানে, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার জন্য বিএনপি ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার কারণে তার বিমানযাত্রা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ডের অনুমোদন পেলেই, তাকে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেখানকার মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে তার লিভার প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য জটিল চিকিৎসা করানো হবে।
চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যদের মতামত
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল-মামুন জানান, “খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কারণে এখনও বিমানে ওঠার জন্য উপযুক্ত নন। তার যাত্রার জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে। যদি তাকে বিমানে ওঠানো হয় এবং কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে এর দায়ভার কার উপর পড়বে? আমাদের চেষ্টা হচ্ছে, তবে বিমানযাত্রা দীর্ঘ সময়ের জন্য হবে, যা তার বর্তমান অবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। যুক্তরাজ্যে নেওয়া হলে ৮ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে হলে ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা সময় লাগবে। তাই, খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে দীর্ঘ সময় থাকতে হবে।”
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা
বিএনপি চেয়ারপারসন বর্তমানে আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন। প্রতিদিন তার চিকিৎসকরা বাসায় গিয়ে নিয়মিত ফলোআপ করছেন। বিভিন্ন দলের নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন এবং তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তার ঘুম এবং খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সূচকগুলো সঠিক মাত্রায় রয়েছে। বয়সজনিত কারণে মাঝে মাঝে কিছু জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসার ইতিহাস এবং পরিকল্পনা
গত জুনে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয় এবং তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। এক বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক তার লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ২ জুলাই তার বাসায় ফেরানো হয়।
ছয় বছর ধরে, বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। গত তিন বছরে, তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য কয়েকবার অনুমতি চাওয়া হলেও, সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরদিন, তার দণ্ড মওকুফ করা হয়।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি সম্প্রতি লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে পৌঁছেছেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা করছে। যদিও বিমানে লম্বা সময় যাত্রার জন্য তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন। মেডিকেল বোর্ডের অনুমোদন পেলেই যুক্তরাষ্ট্র অথবা যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।