শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর রাতের অন্ধকারে রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারে সংঘটিত একটি ভয়াবহ ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এই দুঃখজনক ঘটনা রাজশাহী শহরের শান্ত পরিবেশে এক ভয়ানক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
শনিবার রাত ১০টার দিকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বিনোদপুর বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। এসময় তাকে কিছু লোক ধরে গণপিটুনি দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে ৫ আগস্টের কোনো মামলা না থাকায়, তাকে বোয়ালিয়া থানায় স্থানান্তরিত করা হয়। বোয়ালিয়া থানায় যাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদের জীবন ও কর্ম
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি নগরীর বুধপাড়া এলাকায়। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল, ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে তাকে হামলার শিকার হতে হয়। এতে তার ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বাম পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাতের রগ কেটে দেওয়া হয়। ওই হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা ব্যবহার করতে বাধ্য হন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি কন্যা সন্তানের বাবা হন। পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবনের নতুন অধ্যায়ের আনন্দের মধ্যে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নবজাতকের ছবি পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দদায়ক মুহূর্ত তার জীবন শেষ হয়ে যায়।
মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেছেন, নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে গণপিটুনির পর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। পরিবার যদি অভিযোগ দায়ের করে, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পরিবার
মাসুদের রাজনৈতিক জীবন এবং তার ওপর হামলার সাথে একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস জড়িত। ২০১৪ সালের হামলার পর থেকে তিনি একজন প্লাস্টিকের পা ব্যবহার করে চলাচল করতেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে, তার পরিবারের সাথে কিছু ভালো মুহূর্তের মধ্যে ছিল না।
নির্দেশনা ও প্রত্যাশা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গত ২২ ডিসেম্বর থেকে এই পদে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনায় রাজশাহী শহরের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।