বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন ঝড় উঠেছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের গুম পরিবারের সদস্যরা অপ্রত্যাশিত দাবি তুলে ধরেছেন। তারা জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনে কি ঘটছে?
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক এবং লেক্সাস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন বলেন, “২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর র্যাব-১ দ্বারা আমি আটক হয়েছিলাম। আমাকে এক মাস ১০ দিন ধরে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এমন নির্যাতন কোনো মানুষ সহ্য করতে পারে না। আমার কান্নার আওয়াজ শুনে আমার পরিবারও চিৎকার করেছিল। কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে আমাকে ছাড়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।”
তিনি আরও জানান, ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তদন্তের কাজ কোথায় চলছে, কীভাবে চলছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন যে, “যদি বাংলাদেশে বন্দিশালা থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ, আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা কি?”
উল্লেখযোগ্য দাবি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করেছেন যে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যতো গুম, খুন ও অপহরণ ঘটেছে তার ৭০-৮০ শতাংশ দায়ী র্যাব। ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে দোষী কর্মকর্তা এবং বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানানো হয়।
তিনি জানান, “মেজর (অব.) সাজ্জাদ আহম্মেদ র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিটি সোর্সের বিচার চাই। র্যাবকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন বাহিনী গঠন করতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের বিপ্লবের প্রতি সম্মান
মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন ছাত্র বিপ্লবের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি স্বাধীন হতে পারিনি। আশা করি, ছাত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাকি ২০ শতাংশ স্বাধীনতা অর্জিত হবে।”
পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা
তিনি গুম, অপহরণ হওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এবং মাসিক ভাতা চালু করার দাবি করেছেন। যারা গুম, খুন ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া অর্ধশতাধিক পরিবারের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।