গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের জনপ্রশাসন ব্যবস্থার পুনর্গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রথম মাসেই উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জনপ্রশাসনের পুনর্গঠন
ড. ইউনূস জানান, বিগত শাসনামলে অনেক কর্মকর্তার পদত্যাগ কিংবা দায়িত্ববিহীন অবস্থায় থাকার কারণে জনপ্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়েছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে বর্তমান সরকার প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চলতি মাসে, ১৩৫ জন অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জন যুগ্মসচিব এবং ১২০ জন উপসচিবকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি, ৫৯টি জেলার জেলা প্রশাসক পরিবর্তন করে নতুন ৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৬৭ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে এবং পুলিশের ১১০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৮০ জন ডিআইজি ও ৩০ জন পুলিশ সুপারসহ মোট ১১০ জন পুলিশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। পাশাপাশি, ২৯৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। বিশেষ করে, সন্ত্রাস দমন আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য কালো আইনের সংস্কার করা হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার
ড. ইউনূস জানান, শিক্ষাক্রমের সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে এবং বই সংশোধন কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করা এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বন্যা মোকাবিলা ও পুনর্বাসন
বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্বাসনের জন্য সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, পুনর্বাসন কাজ চলমান রয়েছে এবং সকলের সহযোগিতায় এই কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা হবে।
জনমত সংগ্রহ ও কমিশন গঠন
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে জনাব সরফরাজ চৌধুরীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিশনগুলি পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর, আগামী অক্টোবর থেকে তাদের কাজ শুরু হবে এবং তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে কিছু মামলার প্রত্যাহার এবং সকল শহীদের পরিবারের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চায় এবং বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু করেছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে যাচাই করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিবর্তন ও উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। যদিও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বর্তমান সরকার ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।