সুরা হাশর পবিত্র কুরআনের ৫৯তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মোট ২৪টি আয়াত রয়েছে। এই সুরাতে ইহুদিদের নির্বাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গে তাদের চুক্তির ভঙ্গের বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বিশেষ ফজিলত এবং গুরুত্বের জন্য পরিচিত। আসুন আমরা এই আয়াতগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করি।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলতের বর্ণনা
হযরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল বেলায় তিনবার ‘আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পাঠ করবে এবং এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য ৭০,০০০ ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। যদি ঐ সময়ে সে মারা যায়, তাহলে সে শহিদের মর্যাদা পাবে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩০৯০)
এছাড়া, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এই আয়াতগুলো পড়বে, তার জন্যও একই মর্যাদা রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের পাঠ আমাদের জীবনে বিশেষ বরকত নিয়ে আসতে পারে।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা অর্থসহ
আয়াতগুলো:
১. هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
- উচ্চারণ: হুআল্লাহ হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাদি, হুয়ার রাহমানুর রাহিম।
- অর্থ: তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু।
- هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
- উচ্চারণ: হুআল্লাহ হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির।
- অর্থ: তিনিই আল্লাহ, যিনি পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তার দাতা, শক্তিশালী এবং মহান।
- هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
- উচ্চারণ: হুআল্লাহুল খালিকুল বারিউল মুছাওয়িরু লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউছাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্; ওয়া হুয়াল আজিজুল হাকিম।
- অর্থ: তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তাঁরই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে।
ফজিলতের মূল কারণ
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে অনেকগুলো সুন্দর নাম উল্লেখ করেছে। এগুলো আমাদের আল্লাহর সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। নামগুলো আমাদের মনে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার উপলব্ধি বাড়ায়। এটি আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে এবং জীবনের সংকটে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করে।
সুরা হাশরের পরিচিতি
সুরা হাশর হলো কুরআনের ৫৯তম সুরা, যা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি ২৪টি আয়াত নিয়ে গঠিত। এই সুরায় মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে ইহুদিদের ইতিহাস ও তাদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সুরাটি আমাদেরকে আল্লাহর নিয়ম এবং আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করে।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের গুরুত্ব
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত আমাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর গুণাবলী এবং তাঁর মহানত্বের কথা বলা হয়েছে। এগুলো পড়লে আমরা আল্লাহর নিকটবর্তী হই এবং তাঁর প্রশংসা করতে পারি। এই আয়াতগুলো আমাদেরকে সঠিক পথ দেখায় এবং আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করে।
ফজিলতের বর্ণনা: হাদিসের আলোকে
হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম” পড়ে এবং তারপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে, আল্লাহ তাকে ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন। এই ফেরেশতারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। যদি সে দিনটি মারা যায়, তাহলে সে শহিদের মর্যাদা পাবে। এটি আমাদের জন্য আল্লাহর বড় রহমত এবং আশীর্বাদ।
আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নাম
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতে আল্লাহর অনেক সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ রাহমান (অসীম দয়ালু) এবং আল্লাহ মালিক (একমাত্র মালিক)। এই নামগুলো আমাদেরকে আল্লাহর মহিমা বোঝাতে সাহায্য করে এবং আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। আল্লাহর নামগুলো আমাদের জীবনে আশ্রয় এবং নিরাপত্তা প্রদান করে।
প্রতিদিনের অভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করার উপায়
আমরা যদি প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ি, তাহলে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনে অনেক উন্নতি হবে। এটি আমাদের মনকে শান্ত করে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি দেয়। নিয়মিত এই আয়াতগুলো পড়লে আমরা আল্লাহর রহমত লাভ করি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য বোঝাতেও সাহায্য করে।
আল্লাহর বরকত ও ক্ষমা প্রাপ্তির উপায়
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত নিয়মিত পড়লে আল্লাহর বরকত এবং ক্ষমা পাওয়া সহজ হয়। আল্লাহ আমাদের দোষ-ত্রুটি মাফ করে দেন এবং আমাদের জীবনে ভালোবাসা এবং শান্তি নিয়ে আসেন। এটি আমাদেরকে সঠিক পথে চলার শক্তি এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যার ফলে আমরা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারি।
শেষ কথা
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করে আশা করছি আপনি একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। এই আয়াতগুলো প্রতিদিন পাঠ করলে আমাদের জীবনে আল্লাহর বিশেষ বরকত আসবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আয়াতগুলোর ফজিলত লাভের তৌফিক দিন। আমিন।