আজ, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ১১২ দিন পর শ্রেণীকক্ষে ফিরে এসেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং আজ থেকে প্রথম বর্ষ বাদে সব বর্ষের ক্লাস শুরু হচ্ছে। প্রথম বর্ষের ক্লাস ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল, যা মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলন এবং শিক্ষকদের পেনশনের স্কিমের বিরুদ্ধে কর্মসূচির কারণে ঘটেছিল। ১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেন এবং শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নেয়। পরিস্থিতি এক পর্যায়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, সরকার পতনের জন্য গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন গঠিত হয়।

নতুন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বণ্টনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি, ১০টি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ছাত্রনেতারা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর কোনো ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য নেই। গত বছরের আন্দোলনের ফলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ থেকে ছাত্রদের মুক্তি মিলেছে। নতুন প্রশাসন ক্যাম্পাসের পরিবেশকে সুস্থ রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীরা ফিরে এসে ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে।

শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত। স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আশিকুর রহমান তন্ময় বলেন, “আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সকাল থেকে উঠে ক্লাসে এসেছি। এটা অন্যরকম অনুভূতি।” ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মো. শরীফ উদ্দিন জানান, “আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের আন্দোলনে ছিলাম, কিন্তু এখন ক্লাসে ফিরে আসতে পেরে স্বাধীনতার অনুভূতি হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, শিক্ষার্থীদের সাদরে বরণ করার জন্য শিক্ষকরা প্রস্তুত রয়েছেন। শিক্ষার পরিবেশকে আরও উন্নত করার জন্য মনোবৈঠক নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ১১২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, থেকে ক্লাস শুরু করছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ঘটনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন পরিবেশ তৈরি করতে প্রস্তুত, যেখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করবে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাবর্তন মানেই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে আশা এবং উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাগত উন্নতিতে সাহায্য করেন। শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়। তাই, নতুন প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন মনোবৈঠক আয়োজন, যা শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবেন।

ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা এবং দ্বন্দ্বের পর এখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ এবং সুষ্ঠু পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক আসন বণ্টন এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ছাত্রসংগঠনগুলোর একক আধিপত্য কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাবর্তন শিক্ষার নতুন সূচনা। তারা তাদের মতামত প্রকাশ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছে যে, তারা অনেক দিন ক্লাসে আসতে পারেনি, কিন্তু এখন তারা প্রস্তুত। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আশিকুর রহমান বলেন, “আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন ক্লাসে ফিরে আসতে পেরে ভালো লাগছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখনও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন ক্লাসের নতুন রুটিন এবং অভ্যস্ত হতে পারা। নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে, যাতে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আশা করছে যে, শিক্ষার্থীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে এবং তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ এবং সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা এবং সমন্বয় থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে। নতুন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার সুযোগ পাবেন, যা আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।