মানব হৃদয়ে হিংসা, বিদ্বেষ, এবং ঘৃণা হলো সবচেয়ে ক্ষতিকর অনুভূতি। এই অনুভূতিগুলি আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করে এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে আমাদের দূরে নিয়ে যায়। তাই, আজ আমরা হিংসা ও বিদ্বেষের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব এবং কীভাবে আমরা এগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি, সেই সম্পর্কে জানব।

হিংসার প্রভাব

হিংসা হলো অন্যদের প্রতি আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহ সহ্য করতে না পারা এবং তাদের ক্ষতি কামনা করা। এটি একজন মানুষের হৃদয়ে ঘৃণা সৃষ্টি করে এবং তার ঈমানকে দুর্বল করে। আল্লাহ বলেন, “যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে, তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয়। আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তাতে তারা আনন্দিত হয়।” (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১২০) অর্থাৎ, হিংসার কারণে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের জন্য ভালোবাসা অনুভব করতে পারি না।

আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত

হাদিসে বলা হয়েছে, “প্রতি সপ্তাহে দুইবার বান্দাদের কর্ম আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। তখন মুমিনদের ক্ষমা করা হয়, কিন্তু যারা অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতায় আছে, তারা ক্ষমা পায় না।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৫) এর মানে হলো, যারা হিংসা করেন, তারা আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হন।

নেক আমলের ক্ষতি

হিংসা শুধু আল্লাহর ক্ষমা থেকেই আমাদের বঞ্চিত করে না, বরং আমাদের সব নেক আমলও ধ্বংস করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “হিংসা এমনভাবে নেক কর্ম ধ্বংস করে, যেমন আগুন খড়ি পুড়িয়ে ফেলে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯০৩)

সম্পর্কের ক্ষতি

হিংসার কারণে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের ঈমান দাবি করে যে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ওই জিনিস ভালোবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।” (বুখারি) তাই, আমাদের হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতে হবে।

কিভাবে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে রক্ষা পাবেন?

১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

প্রথমত, আমাদের উচিত আল্লাহর জন্য অন্যকে ভালোবাসা। যদি আমরা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি, তাহলে আমাদের মধ্যে বিদ্বেষের স্থান থাকবে না।

২. শত্রুতা ও বিদ্বেষ এড়ানো

দ্বিতীয়ত, আমাদের উচিত শত্রুতা ও বিদ্বেষ এড়ানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ কোরো না এবং সম্পর্ক ছিন্ন কোরো না।” (বুখারি)

৩. নিজের গুনাহের দিকে নজর দেওয়া

তৃতীয়ত, নিজের গুনাহের দিকে নজর রাখা এবং অন্যদের পাপ নিয়ে চিন্তা না করা। আমাদের উচিত আমাদের পাপ নিয়ে চিন্তা করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৪. আল্লাহর স্মরণে থাকা

চতুর্থত, আল্লাহর জিকিরে নিজেদের ব্যস্ত রাখা। যখন আমরা আল্লাহর স্মরণে থাকব, তখন আমাদের মনে হিংসার স্থান থাকবে না।

ঈমানের প্রকৃত চিত্র

হিংসা ও বিদ্বেষ হলো অন্তরের সমস্যা। যদি আমাদের হৃদয় পরিষ্কার না হয়, তাহলে আমাদের কর্মও নষ্ট হবে। ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য হলো, সে সবসময় তার ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করে এবং হিংসা বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকে।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই মুমিনরা সবাই ভাই ভাই।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০) এর মানে হলো, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নির্মল এবং সদালাপ থাকতে হবে।

শেষ কথা

হিংসা ও বিদ্বেষ ত্যাগ করা হলো প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি বৃদ্ধি করুন। আমিন।