আজকের বিশ্বে হৃদরোগ একটি বড় সমস্যা। হৃদরোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। আমাদের দেশে হৃদরোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি, এবং বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশ হৃদরোগের কারণে ঘটে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে এই মৃত্যুগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপের বিষয়টা কী?
উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে রক্তের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে হয়ে থাকে এবং এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। অধিকাংশ মানুষ জানেই না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
হৃদরোগের সাথে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। প্রতিবছর ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার মধ্যে ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ।
সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। অনেক মানুষ জানেই না তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, “আমাদের সচেতনতা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।”
খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অপরিহার্য। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, “সঠিক খাদ্যাভ্যাস না হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।” তাই আমাদের উচিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, যেমন শাক-সবজি এবং ফল।
গবেষণার প্রয়োজন
ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, “দেশব্যাপী উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ বুঝতে গবেষণা প্রয়োজন।” বিভিন্ন অঞ্চল, বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী আমাদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যাতে আমরা উচ্চ রক্তচাপের পরিস্থিতি ভালভাবে বুঝতে পারি।
তৃণমূল পর্যায়ে ওষুধের সরবরাহ
মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “তৃণমূল পর্যায়ে সবার জন্য উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।” এই কারণে জরুরি তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যাতে আমরা জানি কতজন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
উচ্চ রক্তচাপের প্রতিরোধ
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি ওয়েবিনারে এই সব বিষয় আলোচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা হলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং তৃণমূল পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর উপায়
আমাদের সবার উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস পালন করা এবং শরীরচর্চা করা। শুধু তাই নয়, আমাদের উচিত আরও সচেতন হওয়া এবং আমাদের পরিবার ও বন্ধুদেরও সচেতন করতে হবে।
আমরা যদি সঠিক পদক্ষেপ নিই এবং সচেতনতা বাড়াই, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আমাদের উচিত একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা। আমাদের স্বাস্থ্য আমাদের হাতে, তাই আসুন আমরা সকলে মিলিত হয়ে হৃদরোগের বিরুদ্ধে লড়াই করি।