২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রাক্কলিত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। এই সংখ্যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪২ লাখ। অর্থাৎ, দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি। এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার ভিত্তিতে।
জনসংখ্যার বৃদ্ধি
বাংলাদেশে সর্বশেষ জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মানে, গত এক বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন। এভাবে জনসংখ্যার বৃদ্ধি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সেক্টরে চাপ সৃষ্টি করে।
গড় আয়ু ও স্বাস্থ্য
গড় আয়ু ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩.৩ বছর। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩.৪ বছর। এর মানে হলো, মানুষের জীবনের গড় সময় কিছুটা কমেছে। তবে জনশুমারি অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে।
শিশু মৃত্যুহার
বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩। মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। এই সংখ্যা দেশে স্বাস্থ্য সেবার উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। তবে স্বাস্থ্য সেবার আরও উন্নতি প্রয়োজন, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে।
শিক্ষার হার
বাংলাদেশের সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে ৭৭.৯ শতাংশ। ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে এই হার সামান্য বেড়ে ৭৫.৬ শতাংশ হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু এখনও অনেক জায়গায় শিক্ষার সুযোগ সীমিত।
কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব
দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৯০ হাজার। যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৮০ শতাংশেরও বেশি। কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রয়োজন। কর্মমুখী শিক্ষায় ঘাটতি, বিদেশে নতুন শ্রমবাজারের অভাব এবং দক্ষতার অভাব—এই তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
নারীদের অবস্থান
নারী খানাপ্রধানের হার ২০২৩ সালে ১৮.৯ শতাংশ হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৭.৪ শতাংশ। নারীদের সমাজে ও অর্থনীতিতে ভূমিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এখনও পুরুষ খানাপ্রধানের সংখ্যা ৮১.১ শতাংশ। এ নিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনতে আরও কাজ করতে হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার
২০২৩ সালে ৫ বছরের বেশি বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৯.৯ শতাংশ। ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১%। এটি আমাদের সমাজের ডিজিটাল প্রবণতা নির্দেশ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক জানান, দেশের উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিসংখ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। যাতে দেশের মানুষ সঠিকভাবে উন্নয়ন সুবিধা পেতে পারে।
সিজারিয়ান ডেলিভারি
২০২৩ সালে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৫০.৭ শতাংশ হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৪১.৪ শতাংশ। এটি একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা। স্বাস্থ্য সেবায় উন্নতি এবং প্রসূতির সুরক্ষার জন্য এই হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৪ সালে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। এটি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলছে। জনসংখ্যার সঠিক ব্যবহার এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হলে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।