বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চারজন ব্যক্তি এবং পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই জরিমানার সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার কমিশনের সভায় গৃহীত হয় এবং এটি শেয়ারবাজারে একেবারে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ঘটনার পটভূমি
২০২১ এবং ২০২২ সালে বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেনে ব্যাপক কারসাজি ঘটে। তথ্য অনুযায়ী, এ কারসাজির মাধ্যমে মোট ৪৭৭ কোটি টাকা মুনাফা তোলা হয়েছে। চারটি প্রতিষ্ঠান এবং চারজন ব্যক্তি একত্রে এই বিপুল মুনাফা অর্জন করে। বিএসইসি বলছে, এ ধরনের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে তারা আরো কঠোর হবে এবং এসব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জরিমানার বিস্তারিত
যাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
- মুশফিকুর রহমান: ১২৫ কোটি টাকা
- ক্রিসেন্ট লিমিটেড: ৭৩ কোটি টাকা
- আর্ট ইন্টারন্যাশনাল: ৭০ কোটি টাকা
- মমতাজুর রহমান: ৫৮ কোটি টাকা
- আব্দুর রউফ: ৩১ কোটি টাকা
- মারজানা রহমান: ৩০ কোটি টাকা
- জুপিটার বিজনেস: ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা
- অ্যাপোলো ট্রেডিং: ১৫ কোটি ১ লাখ টাকা
- ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল: ৪ কোটি ১ লাখ টাকা
কারসাজির পদ্ধতি
বিএসইসি জানায়, এই কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিরা একাধিক ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন করেছেন। তারা সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠানটির ১০ শতাংশেরও বেশি শেয়ার কিনলেও কোন ঘোষণা দেননি, যা সিকিউরিটিজ নিয়মনীতির লঙ্ঘন।
শেয়ার বিক্রির কৌশল
কারসাজির মাধ্যমে এই ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলি বেক্সিমকোর শেয়ার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে। তবে তারা এসব শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর ক্রয়াদেশ দিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের স্বচ্ছতা হুমকির মুখে পড়ে।
বাজার বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বিএসইসির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের জরিমানা শেয়ার কারসাজিকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “নিয়ম-নীতির সঠিক প্রয়োগ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এই জরিমানার ফলে বিদেশি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক সংকেত যাবে। যদিও কর্তৃপক্ষ মনে করে যে, প্রকৃত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা জরুরি। জরিমানার অর্থ আদায় ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেষ কথা
বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে এই কারসাজির ঘটনা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য একটি বড় সংকেত। বিএসইসি বর্তমানে কঠোর ভূমিকা পালন করছে এবং এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাজারের স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এই পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।