বাংলাদেশে বায়ুস্তরের ওপরে ঘূর্ণিবাতাসের কারণে বুধবার থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই বৃষ্টির ফলে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যা আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) এবং শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি আনতে পারে। তবে শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে, এমনটা জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেছেন, যখন বায়ুস্তরের ওপরে ও ভূপৃষ্ঠে ঘূর্ণিবাতাস থাকে, তখন তাকে আমরা লঘুচাপ বলি। বর্তমানে যেটা ঘটছে, সেখানে বায়ুস্তরের ওপরের দিকে ঘূর্ণিবাতাস সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে তা নেই। এই ঘূর্ণিবাতাসের কারণে এখন বৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে লঘুচাপ শুরুর আগের অবস্থা বিরাজ করছে, কিন্তু এটি আজ লঘুচাপে পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিবাতাস বর্তমানে দেশের মধ্যাঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকা ও ফরিদপুর এলাকায় অবস্থান করছে এবং এটি ধীরে ধীরে পশ্চিমাঞ্চলে কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর দিকে যাবে।

বৃষ্টির পূর্বাভাস

বৃষ্টি আজসহ দুই দিন থাকতে পারে। শনিবার থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ। এই সময় দেশের উত্তরাঞ্চল, যেমন রংপুর ও রাজশাহীতে কম বৃষ্টি হতে পারে। তবে অন্যান্য বিভাগগুলোতে অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে।

এ সময় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে, কিন্তু রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সমুদ্রবন্দর ও নৌযান চলাচল

এদিকে, দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেনের মতে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।

এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

বৃষ্টির পরিমাণ

ঢাকায় বুধবার রাত ১২টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে, যেখানে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে ১১৪ এবং নোয়াখালীর মাইজদীতে ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

নৌপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের ছয়টি নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

উপকূলীয় অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া ও সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করার কারণে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা থেকে হাতিয়া, ঢাকা থেকে বেতুয়া, ঢাকা থেকে খেপুপাড়া, ঢাকা থেকে চরমোন্তাজ, ঢাকা থেকে রাঙ্গাবালী এবং ঢাকা থেকে মনপুরা উপকূলীয় অঞ্চলের নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা এহতেশামুল পারভেজ জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো এই সময়ে সচেতন থাকা এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বিশেষ করে নৌপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে।

সংক্ষেপে

বৃষ্টির কারণে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত রয়েছে এবং নৌপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।