মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা সফর শেষে, তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিদায় নেন। এ সময় তাঁকে বিদায় জানান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

৪ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ ছাড়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ফলপ্রসূ সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।”

আনোয়ার ইব্রাহিম দুপুরে ইসলামাবাদ হয়ে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এ সময় বলেন, “আমি আনোয়ারকে স্বাগত জানাতে পেরে খুব খুশি।”

ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দুই শীর্ষ নেতা বৈঠকে বসেন। বৈঠকের শেষে তারা যৌথ প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন। এছাড়া বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আনোয়ার ইব্রাহিম সাক্ষাৎ করেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “আমরা শ্রমিক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের শ্রমিক দরকার, তাদের আধুনিক দাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না।”

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার বাংলাদেশের ১৮ হাজার শ্রমিকের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে অবিলম্বে মনোযোগ দেবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে দেশটিতে অবৈধ কর্মকাণ্ড না ঘটে।”

ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বর্তমানে প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন, যেখানে গত বছর প্রায় সাড়ে চার লাখ নতুন অভিবাসী গেছেন।

ড. ইউনূস আনোয়ার ইব্রাহিমকে পুরোনো বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাদের ৪০ বছরের সম্পর্কের কথা জানান। বৈঠকে তারা রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়েও আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এটি আমাদের জন্য একটি সমস্যা, আমাদের দ্রুত সমাধান করতে হবে।”

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক সমাধানের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ঢাকায় আসার সময় আনোয়ার ইব্রাহিমকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ড. ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ২০২৫ সালে আসিয়ানের সভাপতি হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “দুর্নীতি, সুশাসন ও অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি আমরা আপস করব না।”

এভাবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আমরা আশা করছি, এই সফরের ফলে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানেও গতি আসবে।