শেরপুরের মানুষের জন্য এই মুহূর্তে খুবই কঠিন সময়। টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে পুরো এলাকা। গত কয়েক দিন ধরে ৩৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আসুন, আমরা এই বন্যার পরিস্থিতি এবং এর ফলে মানুষের জীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে, তা বিস্তারিতভাবে জানি।

গতকাল শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে চারজন। এই চারজনের মধ্যে দুই ভাই আবু হাতেম (৩০) এবং আলমগীর (১৭) সহ আরও দুইজন। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু স্রোতে ভেসে যায়। এছাড়া, আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ৩৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে গেছে।

বন্যার কারণে বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কিছু এলাকায় পানি বাড়ছে, আবার কিছু জায়গায় কমতে শুরু করেছে। যদিও নালিতাবাড়ী উপজেলার অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক রাস্তা পানির নিচে চলে গেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন (৭০) জানিয়েছেন, এর আগে কখনও এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি।

শেরপুরের ইউএনও মাসুদ রানা জানিয়েছেন, আটটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৩৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভা মিলে ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার এবং খাওয়ার পানি বিতরণ করেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলায়ও বন্যার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও শুক্রবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়নি, কিন্তু উজানের ঢলে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। সেখানে ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউএনও মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানিয়েছেন, পানির প্রবাহ এখনো বাড়ছে এবং মানুষের জন্য সাহায্য পৌঁছানো হচ্ছে।

ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় ১২৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানকার মানুষ হঠাৎ বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি, এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর এবং কলমাকান্দা উপজেলায়ও বন্যা অবস্থা সংকটাপন্ন। এখানেও ১৫০ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুরে উদ্ধার কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন, সেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী কাজ করছে। সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করেছে এবং পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে।

শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। অনেকেই গৃহহীন হয়েছেন, জীবন হারিয়েছেন। কিন্তু সরকারের উদ্যোগ এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা আশা করতে পারি যে, এই সংকটকালীন সময়ে মানুষ দ্রুত পুনর্বাসিত হবে। সকলের জন্য দোয়া ও সহযোগিতা প্রয়োজন।