বাংলাদেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কথা বলতে গেলে শুরু করতে হয় একটি জটিল পরিস্থিতি থেকে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বাজারের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি ঘটেছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম একের পর এক বেড়েই চলছে। বাজারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ

প্রথমত, সরকারের কাছে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের আশা ছিল, তাদের জীবনযাত্রার খরচ কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়ছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ও ব্রয়লার মুরগির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গেছে। চাল ও আটার দামও একইভাবে বাড়তি।

 

সরকার এখন কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। কিছু পণ্যের শুল্ক এবং কর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারে অভিযানের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। জেলা জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা বাজার মনিটরিংয়ের জন্য কাজ করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই পদক্ষেপগুলো কেন এত দেরিতে নেওয়া হলো?

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রায়হান মন্তব্য করেছেন যে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। তিনি বলছেন, মুদ্রা এবং রাজস্বনীতি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।

 

গণ-অভ্যুত্থানের পর কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন যে, কারওয়ান বাজারে ডিমের দাম সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে যদি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা কিভাবে পূরণ হবে?

 

বর্তমানে বাজারে ডিম, ব্রয়লার মুরগি, আলু, পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে ডিমের দাম ১০ টাকাও বেড়ে যেতে পারে একদিনে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সম্প্রতি ১১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এতে বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসলেও, সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

 

সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যেমন পণ্যের শুল্ক কমানো, বাজার অভিযান পরিচালনা এবং আমদানির অনুমতি দেওয়া। কিন্তু এ সব পদক্ষেপ বাজারের জন্য কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

 

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল, চিনি, গম, এবং মসুর ডালের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে দেশে খাদ্যদ্রব্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জীবনযাত্রা সহজ করা। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। নিম্ন আয়ের মানুষ এখন দারুণ সমস্যায় পড়েছেন। বাজারে সঠিক নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

 

বাংলাদেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে হতাশা রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে