মানুষের মধ্যে হিংসা একটি স্বাভাবিক অনুভূতি, যা অনেক কারণে হতে পারে। আমরা যখন অন্যের সাফল্য, সৌন্দর্য বা সুখের দিকে তাকাই, তখন হিংসুকদের মনে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়। হিংসা আসলে আমাদের অক্ষমতা বা একই কাজ কারার অক্ষমতা অনুভূতি থেকে হিংসা জন্ম নেয়। আমরা অনেক সময় অন্যদের অর্জনকে নিজেদের সাথে তুলনা করি, যা আমাদের মনকে বিষণ্ণ করে তলে, এতে আমাদের মনে হিংসার জন্ম নেই।
হিংসা হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। যখন আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হই, তখন অন্যের সফলতা আমাদের দুঃখ বাড়িয়ে দেয়। এই দুঃখের ফলে হিংসা জন্ম নেয়। এটি মানুষের মনকে আরও বিষণ্ণ করে তলে এবং আমরা দুঃখী হয়ে পড়ি।
আমাদের চারপাশে এমন মানুষ থাকে যারা অনেক পরিশ্রম করে সফলাতা অর্জন করে, আবার এমন কিছু মানুষ আছে পরিশ্রম না করে সফল হতে গিয়ে ব্যর্থ হয় অথবা ঐ কাজটি করার যোগ্যতা থাকে না, তখন তাদের সফলতা দেখে মনে হিংসার জন্ম নেই।
পারিবারিক পরিবেশও হিংসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যদি ছোটবেলায় কাউকে বেশি ভালোবাসা না পাওয়া যায় বা প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকে, তবে বড় হয়ে সেই ব্যক্তি হিংসার শিকার হতে পারেন। পরিবারের মধ্যে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে সেই সন্তানের মনে হিংসার বীজ গজিয়ে ওঠে। এভাবেই সমাজে হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হিংসার অনুভূতি দেখা যায়। বিশেষ করে স্কুলে বা কলেজে, যখন কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করে এবং অন্যরা পেছনে পড়ে যায়, তখন হিংসার জন্ম হয়। কিছু ছাত্রছাত্রীরা অন্যদের সফলতা দেখতে পছন্দ করেন না। তারা চেষ্টা করেন সেই সফলতাকে খাটো করে দেখাতে। এতে করে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়।
সামাজিক মাধ্যমের হিংসার আবির্ভাব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে আমরা অন্যদের জীবনযাপন দেখতে পাই। যখন আমরা দেখি কেউ সুন্দর জীবন যাপন করছে, তখন আমাদের মনে হিংসার অনুভূতি জন্ম নেয়। এই হিংসা আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে এবং সুখী হতে বাধা দেয়।
হিংসা শুধু একটি অনুভূতি নয়, এটি অনেক সময় মানুষের আচরণকেও প্রভাবিত করে। যখন কেউ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে, তখন তারা অসৎ পথে যেতে পারে, সফল ব্যক্তিকে প্রতিহত করতে। এটি সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায় এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা তৈরি করে। যদি আমাদের মধ্যে হিংসা বেশি বেড়ে যায়, তবে এটি সমাজের জন্য বিপর্যয়কর হয়ে ওঠে।
তবে, হিংসাকে পরিহার করা সম্ভব। আমাদের উচিত অন্যদের সফলতাকে উদযাপন করা এবং নিজেদের উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া। হিংসার পরিবর্তে যদি আমরা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন প্রদান করি, তবে সমাজ আরও সুন্দর হবে। আমরা যদি অন্যদের প্রতি সদয় হই এবং নিজেদের সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা করি, তবে হিংসা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাবে।
হিংসা কেন সকলের জন্য ক্ষতিকর?
- মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি: হিংসা মানুষকে বিষণ্ণ ও অস্থির করে তোলে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়।
- সামাজিক সম্পর্কের অবনতি: হিংসার কারণে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক নষ্ট হয়, যা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- অসৎ আচরণ: হিংসা মানুষকে অসৎ পথে পরিচালিত করতে পারে, যেমন গুজব ছড়ানো বা অন্যদের ক্ষতি করা।
- আত্মবিশ্বাসের ক্ষতি: হিংসার ফলে নিজের প্রতি অবিশ্বাস জন্মায়, যা নিজের সফলতাকে বাধা সৃষ্টি করে।
- সমাজের জন্য বিপজ্জনক: যখন সমাজে হিংসার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন এটি সহিংসতা এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে।
- অর্থনৈতিক ক্ষতি: হিংসা কাজের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে, ফলে উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং অর্থনৈতিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়।
- আত্ম-শ্রেষ্ঠতার অনুভূতির অভাব: হিংসার কারণে মানুষ অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হারাতে শুরু করে, যা সমাজের একতা ও সমৃদ্ধিকে ক্ষতি করে।
হিংসা সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি শুধু একজনের নয়, বরং সকলের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের উচিত হিংসার পরিবর্তে সহানুভূতি ও ভালোবাসা প্রচার করা।
সংক্ষেপে, মানুষের মধ্যে হিংসা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এটি যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তবে এটি আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তাই, আমাদের উচিত একে পরিহার করা এবং একে অপরকে সমর্থন করা এগিয়ে জেতে। এতে আমাদের জীবন আরও সুখময় ও সমৃদ্ধ হবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া