দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও, এখন তাদের আগমন নিশ্চিত হয়েছে। ২০১৫ সালের পর এটাই প্রথম টেস্ট সিরিজ, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশে এসেছে। বুধবার সকালে টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বে তারা ঢাকায় পা রেখেছে। যদিও বাভুমা চোটের কারণে প্রথম টেস্টে খেলতে পারছেন না। তার জায়গায় এইডেন মার্করাম এই টেস্ট ম্যাচে দলের নেতৃত্ব দেবেন।
বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ২১ অক্টোবর মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এরপর ২৯ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি। ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাড়ার কথা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দলের।
সাউথ আফ্রিকা টেস্ট দলের নামগুলো দেখলে বোঝা যায়, তারা বেশ শক্তিশালী। স্কোয়াডে কাগিসো রাবাদা, কেশভ মহারাজের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছেন। তবে নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে দলের সংখ্যা অনেক, যারা এই পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সুতরাং, বাংলাদেশের কাছে সুযোগ রয়েছে তাদের পরাস্ত করার।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটিও জয় পায়নি। ১২টি ম্যাচেই হেরেছে, আর বাকি দুটি ড্র হয়েছে ২০১৫ সালে বৃষ্টির কারণে। তবে এবার বাংলাদেশের সামনে ইতিহাস বদলানোর সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াডে বেশ কিছু নতুন মুখ রয়েছে, যাদের জন্য এই কন্ডিশনে খেলা কঠিন হতে পারে। বাংলাদেশের দলও এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কিছু সন্দেহ রয়েছে।
গত অগাস্টে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টানোর পর নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের পর তারা সবকিছু নিরাপদ মনে করে সিরিজের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে। এর ফলে, এই সিরিজ এখন নিশ্চিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
বাংলাদেশের দল কিভাবে খেলবে, সেটি নিয়ে এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে। নতুন কোচ হিসেবে ফিল সিমন্স দায়িত্ব নিচ্ছেন, এবং তিনি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে দলকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারেন। এদিকে, সাকিব আল হাসানও তার শেষ টেস্ট খেলার পরিকল্পনা করছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াডে কিছু পরিবর্তন এসেছে। চোটের কারণে টেম্বা বাভুমাকে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য রাখা হয়েছে, কিন্তু প্রথম টেস্টের জন্য তারা মার্করামকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে। এছাড়া, ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং লুঙ্গি এনগিডিকে আবার দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি চলছে। তারা বেশ উৎসাহিত এবং বাংলাদেশে তাদের ৯ বছরের মধ্যে প্রথম সফর করতে পারা বড় একটি বিষয়। এই সিরিজটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ, তাই প্রতিটি ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা এখন সিরিজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে সুযোগ রয়েছে নিজেদের ইতিহাস পাল্টানোর। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের উপর বিশেষ চাপ থাকবে। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে সাকিবের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বাংলাদেশ টিমের অন্যান্য খেলোয়াড়রাও তাদের দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করবে।
এই সিরিজটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি নতুন অধ্যায় হতে পারে। সবাই আশাবাদী যে বাংলাদেশ নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে পারবে এবং নিজেদের মাঠে জয়লাভ করবে। ক্রিকেটের এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়টায় সমর্থকরা মাঠে গিয়ে দলের জন্য সমর্থন জোগাবে, এটি নিশ্চিত।
এখানে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট স্কোয়ার্ডের তালিকা:
- টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক, দ্বিতীয় টেস্ট)
- এইডেন মার্করাম (অধিনায়ক, প্রথম টেস্ট)
- ডেভিড বেডিংহ্যাম
- ম্যাথু ব্রিটজকি
- ডেওয়াল্ড ব্রেভিস
- টোনি ডি জোর্জি
- কেশভ মহারাজ
- ভিয়ান মুল্ডার
- সেনুরান মুতুসামি
- ডেন প্যাটারসন
- লুঙ্গি এনগিডি
- ডেন পিট
- কাগিসো রাবাদা
- ট্রিস্টান স্টাবস
- রায়ান রিকেলটন
- কাইল ভেরেইনা
মোটকথা, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বাংলাদেশ সফর আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সবাই চাইবে, এই সফর দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে উঠুক। আগামী দিনগুলোতে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স কেমন হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জাকির হাসান