আমরা যখন চারপাশে তাকাই, তখন দেখতে পাই যে পরিবেশের অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটছে। আজকাল পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের হ্রাসের মতো সমস্যা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষের জীবিকা একে অপরের সাথে জড়িত, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত বছর সিলেটসহ দেশের অনেক জায়গায় বন্যার ফলে মানুষের দুর্ভোগ দেখা গেছে। প্রকৃতি যেন প্রতিশোধ নিচ্ছে আমাদের জন্য। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমরা আমাদের পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হতে শিখি, কিন্তু বাস্তবে আমাদের কাজের প্রতি সঠিক মনোযোগ নেই।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ ভূমির মরুকরণ ঘটেছে। আমাদের দেশের পানি, বায়ু এবং মাটি—এই তিনটি উপাদান প্রতিদিন দূষিত হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম নাজুক শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে। প্রতিবছর বাংলাদেশে দুই লাখেরও বেশি মানুষ পরিবেশ দূষণের কারণে মারা যাচ্ছে।
বিজ্ঞানের উন্নতি এবং আমাদের অসচেতনতাই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। আমাদের চারপাশের পরিবেশে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে সবার জানা উচিত। আমরা যখন ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলি, তখন পরিবেশের ক্ষতি করি। আমাদের উচিত, নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলা এবং বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। গাছ না কাটা এবং বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে।
শিল্প-কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পানি দূষণ বাড়ছে। নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়ে গেছে যে, সেখানে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। এর ফলে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তাই সরকারের উচিত, শিল্প-কারখানাগুলোতে নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করা এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি কাটার ফলে ভূমিক্ষয় হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিকল্পিত নির্মাণ এবং বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে কৃষির অবনতি হচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যেন খরা এবং মরুকরণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যেমন, বর্ষাকালে পদ্মা ও তিস্তা নদীর পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আইন রয়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে এসব আইন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এজন্য নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশের যত্ন নেওয়া। এজন্য আমাদের সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা, গাছ লাগানো এবং ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা—এগুলো খুবই জরুরি। শুধু সরকারই নয়, আমাদের সবাইকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।
পরিবেশের সুরক্ষায় আমাদের আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন, নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ নিয়ে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা।
পরিবেশ রক্ষায় আমাদের প্রত্যেকেরই সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত। গাছ লাগানো, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা এবং আইন মেনে চলার মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে পারি। এই পরিবর্তনগুলো ছোট হলেও, এগুলো একত্রে মিলিয়ে একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের সূচনা করবে।
আমাদের আসল দায়িত্ব হলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ রেখে যাওয়া। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হয়ে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করি। একসঙ্গে চেষ্টা করলে, আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে পারব।
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তা আমাদের পরিবেশ। পরিবেশের প্রধান তিনটি উপাদান হলো—মাটি, পানি ও বায়ু। এগুলো দূষিত হলে পুরো পৃথিবীই বিপন্ন হবে। আমাদের জীবন এবং স্বাস্থ্য সবকিছুই এই পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল।
পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সচেতনতা এবং উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশের জন্য আমাদের কাজই আমাদের জীবনের জন্য এবং ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। আমাদের উচিত, পরিবেশকে রক্ষা করা, কারণ এটাই আমাদের একমাত্র বাসস্থান।
আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নেই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই, পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব, এবং এটির উপর আমাদের জীবনের সুষ্ঠু কার্যক্রম নির্ভরশীল।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া